পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

পুঁটুলিটা ওর সামনে তুলে ধরলে। হাবলু না নিয়ে ভয়ে ভয়ে তার জেঠামশায়ের মুখের দিকে চেয়ে রইল।

 মধুসূদন ফস্ করে পুঁটুলিটা কুমুর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, “এ রুমালটা কার?”

 মুহূর্তের মধ্যে কুমুর মুখ লাল হয়ে উঠল; বললে, “আমার।”

 এ রুমালটা যে সম্পূর্ণই কুমুর, তাতে সন্দেহ নেই—অর্থাৎ বিবাহের পূর্বের সম্পত্তি। এতে রেশমের কাজ করা যে-পাড়টা সেও কুমুর নিজের রচনা।

 ফুলগুলো বের করে মাটিতে ফেলে মধুসূদন রুমালটা পকেটে পুরলে; বললে, “এটা আমিই নিলুম—ছেলেমানুষ এ নিয়ে কী করবে? যা তুই।”

 মধুসূদনের এই রূঢ়তায় কুমু একেবারে স্তম্ভিত। ব্যথিতমুখে হাবলু চলে গেল, কুমু কিছুই বললে না।

 তার মুখের ভাব দেখে মধুসূদন বললে, “তুমি তো দানসত্র খুলে বসেছ, ফাঁকি কি আমারই বেলায়? এ-রুমাল রইল আমারই মনে থাকবে কিছু পেয়েছি তোমার কাছ থেকে।”

 মধুসূদন যা চায় তা পাবার বিরুদ্ধে ওর স্বভাবের মধ্যেই বাধা।

 কুমু চোখ নিচু করে সোফার প্রান্তে নীরবে বসে রইল। শাড়ির লাল পাড় তার মাথা ঘিরে মুখটিকে বেষ্টন করে নেমে এসেছে, তারই সঙ্গে সঙ্গে নেমেছে তার ভিজে এলো চুল। কণ্ঠের নিটোল কোমলতাকে বেষ্টন করে আছে একগাছি সোনার হার। এই হারটি ওর মায়ের, তাই সর্বদা পরে থাকে। তখনও জামা পরে নি, ভিতরে কেবল একটি শেমিজ, হাত দুখানি খোলা, কোলের উপরে স্তব্ধ। অতি সুকুমার শুভ্র হাত, সমস্ত দেহের বাণী ওইখানে যেন উদ্বেল। মধুসূদন নতনেত্রে অভিমানিনীকে

১৬৫