পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

চেয়ে-চেয়ে দেখলে, আর চোখ ফেরাতে পারলে না মােটা সােনার কাঁকন পরা ওই দুখানি হাতের থেকে। সােফায় ওর পাশে বসে একখানি হাত টেনে নিতে চেষ্টা করলে—অনুভব করলে বিশেষ একটা বাধা। কুমু হাত সরাতে চায় না ওর হাত দিয়ে চাপা আছে একটা কাগজের মােড়ক।

 মধুসূদন জিজ্ঞাসা করলে, “ওই কাগজে কী মােড়া আছে?”

 “জানি নে।”

 “জান না, তার মানে কী?”

 “তার মানে আমি জানি নে।”

 মধুসূদন কথাটা বিশ্বাস করলে না; বললে, “আমাকে দাও, আমি দেখি।”

 কুমু বললে, “ও আমার গােপন জিনিস, দেখাতে পারব না।”

 তীরের মতাে তীক্ষ্ণ একটা রাগ এক মুহূর্তে মধুসূদনের মাথায় চড়ে উঠল। বললে, “কী! অস্পর্ধা তো কম নয়।” বলে জোর করে সেই কাগজের মােড়ক কেড়ে নিয়ে খুলে ফেললে—দেখে যে কিছুই নয়, কতকগুলি এলাচদানা। মাতার সস্তা ব্যবস্থায় হাবলুর জন্যে যে জলখাবার বরাদ্দ তার মধ্যে এইটেই বােধ করি সবচেয়ে হাবলুর পক্ষে লােভনীয়— তাই সে যত্ন করে মুড়ে এনেছিল।

 মধুসূদন অবাক! ব্যাপারখানা কী! ভাবলে, বাপের বাড়িতে এই রকম জলখাবারই কুমুর অভ্যস্ত—তাই লুকিয়ে আনিয়ে নিয়েছে, লজ্জায় প্রকাশ করতে চায় না। মনে-মনে হাসলে; ভাবলে, লক্ষ্মীর দান গ্রহণ করতে সময় লাগে। ধাঁ করে একটা প্ল্যান মাথায় এল। দ্রুত উঠে বাইরে গেল চলে।

 কুমু তখন দেরাজ খুলে বের করলে তার একটি ছােটো চৌকো চন্দনকাঠের বাক্স, তার মধ্যে এলাচদানাগুলি রেখে তার দাদাকে চিঠি লিখতে

১৬৬