পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

হয়ে উঠল। বললে, “সেই খবর দেবার জন্যেই তো আজ সকালে তোমার কাছে এসেছি।” বলা বাহুল্য, এটা মিথ্যে কথা।

 “দাদা কবে আসবেন?”

 “হপ্তাখানেকের মধ্যে।”

 মধু নিশ্চিত জানত, কালই বিপ্রদাস আসবে, ‘হপ্তাখানেক’ কথাটা ব্যবহার করে খবরটাকে অনির্দিষ্ট করে রেখে দিলে।

 “দাদার শরীর কি আরও খারাপ হয়েছে?”

 “না, তেমন কিছু তো শুনলুম না।”

 এ-কথাটার মধ্যেও একটুখানি পাশ-কাটানো ছিল। বিপ্রদাস চিকিৎসার জন্যই কলকাতায় আসছে—তার অর্থ, শরীর অন্তত ভালো নেই।

 “দাদার চিঠি কি এসেছে?”

 “চিঠির বাক্স তো এখনও খুলি নি, যদি থাকে তোমাকে পাঠিয়ে দেব।”

 কুমু মধুসূদনের কথা অবিশ্বাস করতে আরম্ভ করে নি, সুতরাং এ-কথাটাও মেনে নিলে।

 “দাদার চিঠি এসেছে কি না একবার খোঁজ করবে কি?”

 “যদি এসে থাকে, খাওয়ার পরে দুপুরবেলা নিজেই নিয়ে আসব।”

 কুমু অধৈর্য দমন করে নীরবে সম্মত হল। তখন আর-একবার মধুসূদন কুমুর হাতখানা টেনে নেবার উপক্রম করছে এমন সময় শ্যামা হঠাৎ ঘরের মধ্যে ঢুকেই বলে উঠল, “ওমা, ঠাকুরপো যে!” বলেই বেরিয়ে যেতে উদ্যত।

 মধুসূদন বললে, “কেন, কী চাই তোমার?”

 “বউকে ভাঁড়ারে ডাকতে এসেছি। রাজরানী হলেও ঘরের লক্ষ্মী তো বটে। তা আজ না-হয় থাক্।” মধুসূদন সোফা থেকে উঠে কোনো কথা না বলে দ্রুত বাইরে চলে গেল।

১৬৮