পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

ছেলেটার উন্নতি হল। সরকারি খরচে পড়াশুনা করে সে আজ ডাক্তারি করে।

 পুরাতন কালের ধনবানদের প্রথামতো মুকুন্দলালের জীবন দুই-মহলা। এক মহলে গার্হস্থ্য, আর-এক মহলে ইয়ার্‌কি। অর্থাৎ এক মহলে দশকর্ম, আর-এক মহলে একাদশ অকর্ম। ঘরে আছেন ইষ্টদেবতা আর ঘরের গৃহিণী। সেখানে পূজা-অর্চনা, অতিথিসেবা, পালপার্বণ, ব্রত-উপবাস, কাঙালিবিদায়, ব্রাহ্মণভােজন, পাড়াপড়শি, গুরুপুরােহিত। ইয়ারমহল গৃহসীমার বাইরেই, সেখানে নবাবি আমল, মজলিসি সমারােহে সরগরম। এইখানে আনাগোনা চলত গৃহের প্রত্যন্তপুরবাসিনীদের। তাদের সংসর্গকে তখনকার ধনীরা সহবত শিক্ষার উপায় বলে গণ্য করত। দুই বিরুদ্ধ হাওয়ার দুই কক্ষবর্তী গ্রহ-উপগ্রহ নিয়ে গৃহিণীদের বিস্তর সহ্য করতে হয়।

 মুকুন্দলালের স্ত্রী নন্দরানী অভিমানিনী, সহ্য করাটা তাঁর সম্পূর্ণ অভ্যাস হল না। তার কারণ ছিল। তিনি নিশ্চিত জানেন বাইরের দিকে তাঁর স্বামীর তানের দৌড় যতদূরই থাক তিনিই হচ্ছেন ধুয়ো, ভিতরের শক্ত টান তাঁরই দিকে। সেইজন্যেই স্বামী যখন নিজের ভালােবাসার ’পরে নিজে অন্যায় করেন, তিনি সেটা সইতে পারেন না। এবারে তাই ঘটল।


 রাসের সময় খুব ধুম। কতক কলকাতা কতক ঢাকা থেকে আমােদের সরঞ্জাম এল। বাড়ির উঠোনে কৃষ্ণযাত্রা, কোনােদিন বা কীর্তন। এইখানে মেয়েদের ও সাধারণ পাড়াপড়শির ভিড়। অন্যবারে তামসিক আয়ােজনটা হত বৈঠকখানাঘরে; অন্তঃপুরিকারা, রাতে ঘুম নেই, বুকে ব্যথা বিঁধছে, দরজার ফাঁক দিয়ে কিছু কিছু আভাস নিয়ে যেতে পারতেন। এবারে খেয়াল গেল বাইচের ব্যবস্থা হবে বজরায় নদীর উপর।

১৭