পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 “তা বললে চলবে না, কিছু উপায় করতেই হবে।”

 “উপায় মাথায় এসেছে।”

 “কী বলো দেখি।”

 “বলতে পারব না।”

 “কেন বলো তো?”

 “লজ্জা বোধ করছি।”

 “আমাকেও লজ্জা?”

 “তোমাকেই লজ্জা।”

 “কারণটা শুনি?”

 “দাদাকে ঠকাতে হবে। সে তোমার শুনে কাজ নেই।”

 “যাকে ভালোবাসি তার জন্যে ঠকাতে একটুও সংকোচ করি নে।”

 “ঠকানো বিদ্যেয় আমার উপর দিয়েই হাত পাকিয়েছ বুঝি?”

 “ও-বিদ্যে সহজে খাটাবার উপযুক্ত এমন মানুষ পাব কোথায়!”

 “ঠাকুরুণ, রাজিনামা লিখে-পড়ে দিচ্ছি, যখন খুশী ঠকিয়ো।”

 “এত ফুর্তি কেন শুনি?”

 “বলব? বিধাতা তোমাদের হাতে ঠকাবার যে-সব উপায় দিয়েছেন তাতে মধু দিয়েছেন ঢেলে। সেই মধুময় ঠকানোকেই বলে মায়া।”

 “সেটা তো কাটানোই ভালো।”

 “সর্বনাশ! মায়া গেলে সংসারে রইল কী? মূর্তির রঙ খসিয়ে ফেললে বাকি থাকে খড় মাটি। দেবী, অবোধকে ভোলাও, ঠকাও, চোখে ঘোর লাগাও, মনে নেশা জাগাও, যা খুশি করো।”

 এর পরে যা কথাবার্তা চলল সে একেবারেই কাজের কথা নয়, এ গল্পের সঙ্গে তার কোনো যোগ নেই।

১৭৬