এর পূর্ব পর্যন্ত ওর মনে দ্বিধা ছিল, সে দ্বিধা সম্পূর্ণ গেল কেটে। কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে আবার ঘরে এসে দেখলে, ওর দাদা ঠিকানাওআলা নামের ফর্দর খাতা নিয়ে পাতা ওলটাচ্ছে। নবীন এসে দাঁড়াতেই মধুসূদন মুখ তুলে রুক্ষ স্বরে জিজ্ঞাসা করলে, “আবার কিসের দরকার? তোমাদের বিপ্রদাসবাবুর মোক্তারি করতে এসেছ বুঝি?”
নবীন বললে, “না দাদা, সে-ভয় নেই। ওঁদের লোকটা এমন তাড়া খেয়ে গেছে যে, তুমি নিজেও যদি ডেকে পাঠাও তবু সে এ-বাড়িমুখো হবে না।”
এ-কথাটাও মধুসূদনের সহ্য হল না। বলে উঠল, “কড়ে আঙুলটা নাড়লেই পায়ের কাছে এসে পড়তে হবে। লোকটা এসেছিল কী করতে?”
“তোমাকে খবর দিতে যে, বিপ্রদাসবাবুর কলকাতা আসা দুদিন পিছিয়ে গেল। শরীর আর-একটু সেরে তবে আসবেন।”
“আচ্ছা আচ্ছা, সেজন্যে আমার তাড়া নেই।”
নবীন বললে, “দাদা, কাল সকালে ঘণ্টা দুয়ের জন্যে ছুটি চাই।”
“কেন?”
“শুনলে তুমি রাগ করবে।”
“না শুনলে আরও রাগ করব।”
“কুম্ভকোনাম থেকে এক জ্যোতিষী এসেছেন, তাঁকে দিয়ে একবার ভাগাপরীক্ষা করাতে চাই।”
মধুসূদনের বুকটা ধড়াস করে উঠল, ইচ্ছে করল এখনই ছুটে তার কাছে যায়। মুখে তর্জন করে বললে, “তুমি বিশ্বাস কর?”
“সহজ অবস্থায় করি নে, ভয় লাগলেই করি।”
“ভয়টা কিসের শুনি।”