পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

অন্ধভাবে এই বিবাহের ফাঁসের মধ্যে টেনে আনলে। অথচ প্রখর রৌদ্রে নিজে গেল মিলিয়ে।

 ইতিমধ্যে মধুসূদন কখন পিছনে এসে দেয়ালে-ঝোলানো আয়নায় কুমুর মুখের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে রইল। বুঝতে পারলে কুমুর মন যেখানে হারিয়ে গেছে সেই অদৃশ্য অজানার সঙ্গে প্রতিযোগিতা কিছুতেই চলবে না। অন্য দিন হলে কুমুর এই আনমনা ভাব দেখলে রাগ হত। আজ শান্ত বিষাদের সঙ্গে কুমুর পাশে এসে বসল; বললে, “কী ভাবছ বড়োবউ?”

 কুমু চমকে উঠল। মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। মধুসূদন তার হাত চেপে ধরে নাড়া দিয়ে বললে, “তুমি কি কিছুতেই আমার কাছে ধরা দেবে না?”

 এ কথার উত্তর কুমু ভেবে পেলে না। কেন ধরা দিতে পারছে না সে-প্রশ্ন ও যে নিজেকেও করে। মধুসূদন যখন কঠিন ব্যবহার করছিল তখন উত্তর সহজ ছিল, ও যখন নতি স্বীকার করে তখন নিজেকে নিন্দে করা ছাড়া কোনো জবাব পায় না। স্বামীকে মনপ্রাণ সমর্পণ করতে না পারাটা মহাপাপ, এ সম্বন্ধে কুমুর সন্দেহ নেই, তবু ওর এমন দশা কেন হল? মেয়েদের একটিমাত্র লক্ষ্য, সতী সাবিত্রী হয়ে ওঠা। সেই লক্ষ্য হতে ভ্রষ্ট হওয়ার পরম দুর্গতি থেকে নিজেকে বাঁচাতে চায়—তাই আজ ব্যাকুল হয়ে কুমু মধুসূদনকে বললে, “তুমি আমাকে দয়া করো।”

 “কিসের জন্যে দয়া করতে হবে?”

 “আমাকে তোমার করে নাও—হুকুম করো, শাস্তি দাও। আমার মনে হয় আমি তোমার যোগ্য নই।”

 শুনে বড়ো দুঃখে মধুসূদনের হাসি পেল। কুমু সতীর কর্তব্য করতে চায়। কুমু যদি সাধারণ গৃহিণী মাত্র হত তাহলে এইটুকুই যথেষ্ট হত,

১৯৬