পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

কিন্তু কুমু যে ওর কাছে মন্ত্র-পড়া স্ত্রীর চেয়ে অনেক বেশি, সেই বেশি। টুকুকে পাবার জন্যে ও যতই মূল্য হাঁকছে সবই ব্যর্থ হচ্ছে। ধরা পড়ছে নিজের খর্বতা। কুমুর সঙ্গে নিজের দুর্লঙ্ঘ্য অসাম্য কেবলই ব্যাকুলতা বাড়িয়ে তুলছে।

 দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে মধুসূদন বললে, “একটি জিনিস যদি দিই তো কী দেবে বলো।”

 কুমু বুঝতে পারলে দাদার দেওয়া সেই জিনিস, ব্যগ্রতার সঙ্গে মধুসূদনের মুখের দিকে চেয়ে রইল।

 “যেমন জিনিসটি তারই উপযুক্ত দাম নেব কিন্তু,” বলে খাটের নীচে থেকে রেশমের খোল দিয়ে মোড়া একটি এসরাজ বের করে তার মোড়কটি খুলে ফেললে। কুমুর সেই চিরপরিচিত এসরাজ, হাতির দাঁতে খচিত। বাড়ি থেকে চলে আসবার সময় এইটি ফেলে এসেছিল।

 মধুসূদন বললে, “খুশি হয়েছ তো? এইবার দাম দাও।”

 মধুসূদন কী দাম চায় কুমু বুঝতে পারলে না, চেয়ে রইল। মধুসূদন বললে, “বাজিয়ে শোনাও আমাকে।”

 এটা বেশি কিছু নয়, তবু বড় শক্ত দাবি। কুমু এইটুকু আন্দাজ করতে পেরেছে যে, মধুসূদনের মনে সংগীতের রস নেই। এর সামনে বাজানোর সংকোচ কাটিয়ে তোলা কঠিন। কুমু মুখ নিচু করে এসরাজের ছড়িটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগল। মধুসূদন বললে, “বাজাও না বড়োবউ, আমার সামনে লজ্জা করো না।”

 কুমু বললে, “সুর বাঁধা নেই।”

 “তোমার নিজের মনেরই সুর বাঁধা নেই, তাই বলো না কেন?”

 কথাটার সত্যতায় কুমুর মনে তখনই ঘা লাগল; বললে, “যন্ত্রটা ঠিক করে রাখি, তোমাকে আর একদিন শোনাব।”

১৯৭