পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

আঁখনকে আগে।” সুরের আকাশে রঙিন ছায়া ফেলে এল সেই অপরূপ আবির্ভাব, যাকে কুমু গানে পেয়েছে, প্রাণে পেয়েছে, কেবল চোখে পাবার তৃষ্ণা নিয়ে যার জন্যে মিনতি চিরদিন রয়ে গেল—“ঠাড়ি রহো মেরে আঁখনকে আগে।”

 মধুসূদন সংগীতের রস বোঝে না, কিন্তু কুমুর বিশ্ববিস্মৃত মুখের উপর যে-সুর খেলছিল, এসরাজের পর্দায় পর্দায় কুমুর আঙুল ছোঁয়ার যে ছন্দ নেচে উঠছিল তাই তার বুকে দোল দিলে, মনে হতে লাগল ওকে যেন কে বরদান করছে। আনমনে বাজাতে বাজাতে কুমু হঠাৎ একসময়ে দেখতে পেলে, মধুসূদন তার মুখের উপর একদৃষ্টে চেয়ে, অমনি হাত গেল থেমে, লজ্জা এল, বাজনা বন্ধ করে দিলে।

 মধুসূদনের মন দাক্ষিণ্যে উদ্বেল হয়ে উঠল, বললে, “বড়োবউ, তুমি কী চাও বলো।” কুমু যদি বলত, কিছুদিন দাদার সেবা করতে চাই, মধুসূদন তাতেও রাজি হতে পারত; কেননা আজ কুমুর গীতমুগ্ধ মুখের দিকে কেবলই চেয়ে চেয়ে সে নিজেকে বলছিল, “এই তো আমার ঘরে এসেছে, এ কী আশ্চর্য সত্য।”

 কুমু এসরাজ মাটিতে রেখে, ছড়ি ফেলে চুপ করে রইল।

 মধুসূদন আর-একবার অনুনয় করে বললে, “বড়োবউ, তুমি আমার কাছে কিছু চাও। যা চাও তাই পাবে।”

 কুমু বললে, “মুরলী বেয়ারকে একখানা শীতের কাপড় দিতে চাই।”

 কুমু যদি বলত কিছু চাই নে, সেও ছিল ভালো, কিন্তু মুরলী বেহারার জন্যে গায়ের কম্বল! যে দিতে পারে মাথার মুকুট, তার কাছে চাওয়া জুতোর ফিতে।

 মধুসূদন অবাক। রাগ হল বেহারাটার উপর। বললে, “লক্ষ্মীছাড়া মুরলী বুঝি তোমাকে বিরক্ত করছে?”

১৯৯