পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 “না, আমি আপনিই ওকে একটা আলোয়ান দিতে গেলুম, ও নিল না। তুমি যদি হুকুম কর তবে সাহস করে নেবে।”

 মধুসুদন স্তব্ধ হয়ে রইল। খানিক পরে বললে, “ভিক্ষে দিতে চাও? আচ্ছা দেখি, কই তোমার আলোয়ান।”

 কুমু তার সেই অনেক দিনের পরা বাদামি রঙের আলোয়ান নিয়ে এল। মধুসূদন সেটা নিয়ে নিজের গায়ে জড়াল। টিপায়ের উপরকার ছোটো ঘণ্টা বাজিয়ে দিতে একজন বুড়ি দাসী এল; তাকে বললে, “মুরলী বেহারাকে ডেকে দাও।”

 মুরলী এসে হাত জোড় করে দাঁড়াল; শীতে ও ভয়ে তার জোড়া হাত কাঁপছে।

 “তোমার মা-জি তোমাকে বকশিশ দিয়েছেন, বলে মধুসূদন পকেট-কেস থেকে এক-শো টাকার একটা নোট বের করে তার ভাঁজ খুলে সেটা দিলে কুমুর হাতে। এ-রকম অকারণে অযাচিত দান মধুসূদনের দ্বারা জীবনে কখনো ঘটে নি। অসম্ভব ব্যাপারে মুরলী বেহারার ভয় আরও বেড়ে উঠল; দ্বিধাকম্পিত স্বরে বললে, “হুজুর—”

 “হুজুর কী রে বেটা! বোকা, নে তোর মায়ের হাত থেকে। এই টাকা দিয়ে যত খুশি গরম কাপড় কিনে নিস।”

 ব্যাপারটা এইখানে শেষ হল—সেই সঙ্গে সেদিনকার আর সমস্তই যেন শেষ হয়ে গেল। যে-স্রোতে কুমুর মন ভেসেছিল সে গেল হঠাৎ বন্ধ হয়ে, মধুসূদনের মনে আত্মত্যাগের যে-ঢেউ চিত্তসংকীর্ণতার কূল ছাপিয়ে উঠেছিল তাও সামান্য বেহারার জন্য তুচ্ছ প্রার্থনায় ঠেকে গিয়ে আবার তলায় গেল নেমে। এর পরে সহজে কথাবার্তা কওয়া দুই পক্ষেই অসাধ্য। আজ সন্ধ্যের সময় সেই তালুক-কেনা ব্যাপার নিয়ে লোক এসে বাইরের

২০০