পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

“আজ শুতে যাও, লক্ষ্মী ছেলে, কাল দুপুরবেলা তোমাকে বাজনা শোনাব।”

 হাবলু করুণ মুখে উঠে মায়ের সঙ্গে চলে গেল।

 কিছুক্ষণ পরেই মোতির মা ফিরে এল। নবীনের ষড়যন্ত্রের কী ফল হল তাই জানবার জন্যে মন অস্থির হয়ে আছে। কুমুর কাছে বসেই চোখে পড়ল, তার হাতে সেই নীলার আংটি। বুঝলে যে কাজ হয়েছে। কথাটা উত্থাপন করবার উপলক্ষ্য-স্বরূপ বললে, “দিদি, তোমার এই বাজনাটা পেলে কেমন করে?”

 কুমু বললে, “দাদা পাঠিয়ে দিয়েছেন।

 “বড়ঠাকুর তোমাকে এনে দিলেন বুঝি?”

 কুমু সংক্ষেপে বললে, “হাঁ।”

 মোতির মা কুমুর মুখের দিকে তাকিয়ে উল্লাস বা বিস্ময়ের চিহ্ন খুঁজে পেলে না।

 “তোমার দাদার কথা কিছু বললেন কি?”

 “না।”

 “পরশু তিনি তো আসবেন, তাঁর কাছে তোমার যাবার কথা উঠল?”

 “না, দাদার কোনো কথা হয় নি।”

 “তুমি নিজেই চাইলে না কেন, দিদি?”

 “আমি ওঁর কাছে আর যা-কিছু চাই নে কেন, এটা পারব না।”

 “তোমার চাবার দরকার হবে না, তুমি অমনিই ওঁর কাছে চলে যেয়ো। বড়ঠাকুর কিছুই বলবেন না।”

 মোতির মা এখনও একটা কথা সম্পূর্ণ বুঝতে পারে নি যে, মধুসূদনের অনুকূলতা কুমুর পক্ষে সংকট হয়ে উঠেছে; এর বদলে মধুসূদন যা চায়

২০৩