পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

যা-কিছুতে আমাকে সেদিন ভুলিয়েছিল তার মধ্যে সমস্তই ছিল ফাঁকি। অথচ এমন দৃঢ় বিশ্বাস, এমন বিষম জেদ যে, সেদিন আমাকে কিছুতেই কেউ ঠেকাতে পারত না। দাদা তা নিশ্চিত জানতেন বলেই বৃথা বাধা দিলেন না, কিন্তু কত ভয় পেয়েছেন, কত উদ্বিগ্ন হয়েছেন তা কি আমি বুঝতে পারি নি? বুঝতে পেরে নিজের ঝোঁকটাকে একটুও সামলাই নি, এতবড়াে অবুঝ আমি। আজ থেকে চিরদিন আমি কেবলই কষ্ট পাব, কষ্ট দেব, আর প্রতিদিন মনে জানব এ-সমস্তই আমার নিজের সৃষ্টি।”

 মােতির মা কী যে বলবে কিছুই ভেবে পেলে না। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে জিজ্ঞাসা করলে, “আচ্ছা দিদি, তুমি যে বিয়ে করতে মন স্থির করলে কী ভেবে?”

 “তখন নিশ্চিত জানতুম স্বামী ভালােমন্দ যাই হােক না কেন স্ত্রীর সতীত্বগৌরব প্রমাণের একটা উপলক্ষ্য মাত্র। মনে একটুও সন্দেহ ছিল না যে, প্রজাপতি যাকেই স্বামী বলে ঠিক করে দিয়েছেন তাকেই ভালোবাসবই। ছেলেবেলা থেকে কেবল মাকে দেখেছি, পুরাণ পড়েছি, কথকতা শুনেছি, মনে হয়েছে শাস্ত্রের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে চলা খুব সহজ।

 “দিদি, উনিশ বছরের কুমারীর জন্যে শাস্ত্র লেখা হয় নি।”

 “আজ বুঝতে পেরেছি সংসারে ভালােবাসাটা উপরি-পাওনা। ওটাকে বাদ দিয়েই ধর্মকে আঁকড়ে ধরে সংসারসমুদ্রে ভাসতে হবে। ধর্ম যদি সরস হয়ে ফুল না দেয়, ফল না দেয়, অন্তত শুকনাে হয়ে যেন ভাসিয়ে রাখে।

 মোতির মা নিজে বিশেষ কিছু না বলে কুমুকে দিয়ে কথা বলিয়ে নিতে লাগল।

২১১