পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

বুকের কাছে টেনে নিলে, কুমু রুদ্ধকণ্ঠে বলে উঠল, “দাদা আমাকে যেতে বারণ করেছেন!”

 নবীন বললে, “না না, বউরানী, তুমি নিশ্চয় ভুল বুঝেছ।”

 কুমু খুব জোরে মাথা নেড়ে জানিয়ে দিলে যে, সে একটুও ভুল বোঝে নি।

 নবীন বললে, “তুমি কোথায় ভুল বুঝেছ বলব? বিপ্রদাসবাবু মনে করেছেন আমার দাদা তোমাকে তাঁদের ওখানে যেতে দিতে চাইবেন না। চেষ্টা করতে গিয়ে পাছে তোমাকে অপমানিত হতে হয়, পাছে ভূমি কষ্ট পাও সেইটে বাঁচাবার জন্যে তিনি নিজে থেকে তোমার রাস্তা সোজা করে দিয়েছেন।”

 কুমু এক মুহূর্তে গভীর আরাম পেলে। তার ভিজে চোখের পল্লব নবীনের মুখের দিকে তুলে স্নিগ্ধদৃষ্টিতে চুপ করে চেয়ে রইল। নবীনের কথাটা যে সম্পূর্ণ সত্য তাতে একটুও সন্দেহ রইল না। দাদার স্নেহকে ক্ষণকালের জন্যও ভুল বুঝতে পেরেছে বলে নিজের উপর ধিক্‌কার হল। মনে খুব একটা জোর পেলে। এখনই দাদার কাছে ছুটে না গিয়ে দাদার আসার জন্যে সে অপেক্ষা করতে পারবে। সেই ভালো।

 মোতির মা চিবুক ধরে কুমুর মুখ তুলে ধরে বললে, “বাস্ রে, দাদার কথার একটু আড় হাওয়া লাগলেই একেবারে অভিমানের সমুদ্র উথলে ওঠে।”

 নবীন বললে, “বউরানী, কাল তাহলে তোমার যাবার আয়োজন করি গে।”

 “না, তার দরকার নেই।”

 “দরকার নেই তো কী? তোমার দরকার না থাকে তো আমার দরকার আছে বই কি।”

২১৬