পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 “তোমার আবার কিসের দরকার?”

 “বা! আমার দাদাকে তোমার দাদা যা-কিছু ঠাওরাবেন সেটা বুঝি অমনি সয়ে যেতে হবে। আমার দাদার পক্ষ নিয়ে আমি লড়ব। তোমার কাছে হার মানতে পারব না। কাল তোমাকে ওঁর কাছে যেতেই হচ্ছে।”

 কুমু হাসতে লাগল।

 বউরানী, এ ঠাট্টার কথা নয়। আমাদের বাড়ির অপবাদে তোমার অগৌরব। এখন চোখে মুখে একটু জল দিয়ে এস, খেতে যাবে। ম্যানেজার-সাহেবের ওখানে দাদার আজ নিমন্ত্রণ। আমার বিশ্বাস তিনি আজ বাড়ির ভিতরে শুতে আসবেন না, দেখলুম বাইরের কামরায় তাঁর বিছানা তৈরি।”

 এই খবরটা পেয়ে কুমু মনে মনে আরাম পেলে, তার পরক্ষণেই এতটা আরাম পেলে বলে লজ্জা বোধ হল।

 রাত্রে শোবার ঘরে মোতির মার সঙ্গে নবীনের ওই কথাটা নিয়ে পরামর্শ চলল। মোতির মা বললে, “তুমি তো দিদিকে আশ্বাস দিলে! তার পরে?”

 “তার পরে আবার কী। নবীনের যেমন কথা তেমনি কাজ। বউরানীকে যেতেই হবে, তার পরে যা হয় তা হবে।”

 নতুন-গড়া রাজাদের পারিবারিক মর্যাদাবোধ খুবই উগ্র। এঁরা নিশ্চয় ঠিক করে আছেন যে, বিবাহ করে নববধূ তার পূর্ব-পদবীর চেয়ে অনেক উপরে উঠেছে; অতএব বাপের বাড়ি বলে কোনো বালাই আছে এ-কথা একেবারে ভুলতে দেওয়াই সংগত। এ-অবস্থায় দুই দিক রক্ষা করা যদি অসম্ভব হয় তবে একটা দিক তো রাখতেই হবে। সেই দিকটা যে কোন্‌টা তা নবীন মনে-মনে পাকা করে রাখলে। যেখানে দাদার অধিকার চরম, সেখানেও কোনোদিন দাদার সঙ্গে লড়াই বাধাতে সাহস

২১৭