পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

হঠাৎ মধুসূনকে দেখে ওর বুক কেঁপে উঠেছিল আতঙ্কে। তখন ওর মনটা সতর্ক ছিল না। যে-ভাবটাকে ও নিজের কাছেও সর্বদা চেপে রাখতে চায়, যার প্রবলতা নিজেও কুমু সম্পূর্ণ জানে না, সে তখন হঠাৎ আত্মপ্রকাশ করেছিল।

 মধুসূদন চিবিয়ে চিবিয়ে বললে, “দাদার কাছে যাবার জন্যে তােমার দরবার?”

 কুমু এই মুহূর্তেই ওর পায়ে পড়তে প্রস্তুত হয়েছিল, কিন্তু ওর মুখে দাদার নাম শুনেই শক্ত হয়ে উঠল। বললে, “না।”

 “তুমি যেতে চাও না?”

 “না, আমি চাই নে।”

 “নবীনকে আমার কাছে দরবার করতে পাঠাও নি?”

 “না, পাঠাই নি।”

 “দাদার কাছে যাবার ইচ্ছে তাকে তুমি জানাও নি?”

 “আমি তাকে বলেছিলুম, দাদাকে দেখতে আমি যাব না।

 “কেন?”

 “তা আমি বলতে পারি নে।”

 “বলতে পার না? আবার তোমার সেই নুরনগরি চাল?”

 “আমি যে সুরনগরেরই মেয়ে।”

 “যাও, তাদের কাছেই যাও। যোগ্য নও তুমি এখানকার। অনুগ্রহ করেছিলেম, মর্যাদা বুঝলে না। এখন অনুতাপ করতে হবে।”

 কুমু কাঠ হয়ে বসে রইল, কোনো উত্তর করলে না। কুমুর হাত ধরে অসহ্য় একটা ঝাঁকানি দিয়ে মধুসূন বললে, “মাপ চাইতেও জান না?”,

 “কিসের জন্যে?”

 “তুমি যে আমার এই বিছানার উপরে শুতে পেরেছ তার জন্যে।

২২৩