পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

হঠাৎ এই গোলমালটা সৃষ্টি করে তার পিছনে একটু আড়াল করলে আপনাকে।

 খানিক বাদে কুকুরের সঙ্গে খেলা বন্ধ করে কুমু মুখ তুলে বললে, “দাদা, তোমার বার্লি খাবার সময় হয়েছে, এনে দিই।”

 “না, সময় হয় নি” বলে কুমুকে ইশারা করে বিছানার পাশের চৌকিতে বসালে। আপনার হাতে তার হাত তুলে নিয়ে বললে, “কুমু, আমার কাছে খুলে বল্, কী রকম চলছে তোদের।”

 তখনই কুমু কিছু বলতে পারলে না। মাথা নিচু করে বসে রইল, দেখতে দেখতে মুখ হল লাল, শিশুকালের মতো করে বিপ্রদাসের প্রশস্ত বুকের উপর মুখ রেখে কেঁদে উঠল; বললে, “দাদা, আমি সবই ভুল বুঝেছি, আমি কিছুই জানতুম না।”

 বিপ্রদাস আস্তে আস্তে কুমুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। খানিক বাদে বললে, “আমি তোকে ঠিকমতো শিক্ষা দিতে পারি নি। মা থাকলে তোকে তোর শ্বশুরবাড়ির জন্যে প্রস্তুত করে দিতে পারতেন।”

 কুমু বললে, “আমি বরাবর কেবল তোমাদেরই জানি, এখান থেকে অন্য জায়গা যে এত বেশি তফাত তা আমি মনে করতে পারতুম না। ছেলেবেলা থেকে আমি যা-কিছু কল্পনা করেছি সব তোমাদেরই ছাঁচে। তাই মনে একটুও ভয় হয় নি। মাকে অনেক সময় বাবা কষ্ট দিয়েছেন জানি, কিন্তু সে ছিল দুরন্তপনা, তার আঘাত বাইরে, ভিতরে নয়। এখানে সমস্তটাই অন্তরে অন্তরে আমার যেন অপমান।”

 বিপ্রদাস কোনো কথা না বলে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চুপ করে বসে ভাবতে লাগল। মধুসূদন যে ওদের থেকে সম্পূর্ণ আর-এক জগতের মানুষ তা সেই বিবাহ-অনুষ্ঠানের আরম্ভ থেকেই বুঝতে পেরেছে। তারই বিষম উদ্বেগে ওর শরীর যেন কোনোমতেই সুস্থ হয়ে উঠছে না। এই

২৩২