বিপ্রদাস তার ভাবনা থেকে হঠাৎ চমকে উঠল। কুমু বুঝতে পারলে, গভীর একটা উদ্বেগের মধ্যে দাদা এতক্ষণ ডুবে ছিল।
কালু যখন ঘর থেকে বেরিয়ে গেল কুমু তার পিছন পিছন গিয়ে বারান্দায় ওকে ধরে বললে, “কালুদা, আমাকে সব কথা বলতে হবে।”
“কী কথা বলতে হবে, দিদি?”
“তোমাদের কী একটা নিয়ে ভাবনা চলছে।”
বিষয় আছে ভাবনা নেই, সংসারে এও কি কখনো সম্ভব হয় খুকী? ও যে কাঁটাগাছের ফল, খিদের চোটে পেড়ে খেতেও হয়, পাড়তে গিয়ে সর্বাঙ্গ ছড়েও যায়।”
“সে-সব কথা পরে হবে, আমাকে বলো কী হয়েছে।”
“বিষয়কর্মের কথা মেয়েদের বলতে নিষেধ।”
“আমি নিশ্চয় জানি তোমাদের কী নিয়ে কথা হচ্ছে। বলব?”
“আচ্ছা, বলো।”
“আমার স্বামীর কাছে দাদার ধার আছে, সেই নিয়ে।”
কোনো জবাব না দিয়ে কালু তার বড়ো বড়ো দুই চোখ সকৌতুক বিস্ময়হাস্যে বিস্ফারিত করে কুমুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
“আমাকে বলতেই হবে, ঠিক বলেছি কি না।”
“দাদারই বোন তো, কথা না বলতেই কথা বুঝে নেয়।”
বিয়ের পরে প্রথম যেদিন বিপ্রদাসের মহাজন বলে মধুসূদন আস্ফালন করে শাসিয়ে কথা বলেছিল, সেইদিন থেকেই কুমু বুঝেছিল দাদার সঙ্গে স্বামীর সম্বন্ধের অগৌরব। প্রতিদিনই একান্তমনে ইচ্ছে করেছিল, এটা যেন ঘুচে যায়। বিপ্রদাসের মনে এর অসম্মান যে বিঁধে আছে তাতে কুমুর সন্দেহ ছিল না। সেদিন নবীন যেই বিপ্রদাসের চিঠির ব্যাখ্যা করলে অমনি কুমুর মনে এল, সমস্তর মূলে আছে এই দেনাপাওনার