পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

মা কাঁদেন, ছেলেদের মুখ শুকনাে। এই সমস্ত শুভে অশুভে সুখে দুঃখে সর্বদা আন্দোলিত প্রকাণ্ড সংসারযাত্রা।

 এরই মধ্য থেকে কুমুদিনী এল কলকাতায়। এ যেন মস্ত একটা সমুদ্র কিন্তু কোথায় একফোঁটা পিপাসার জল? দেশে আকাশের বাতাসেরও একটা চেনা চেহারা ছিল। গ্রামের দিগন্তে কোথাও বা ঘন বন, কোথাও বা বালির চর, নদীর জলরেখা, মন্দিরের চূড়ো, শূন্য় বিস্তৃত মাঠ,বুনাে ঝাউয়ের ঝোপ, গুণটানা পথ— এরা নানা রেখায় নানা রঙে বিচিত্র ঘের দিয়ে আকাশকে একটি বিশেষ আকাশ করে তুলেছিল, কুমুদিনীর আপন আকাশ। সূর্যের আলােও ছিল তেমনি বিশেষ আলো। দিঘিতে, শস্যখেতে, বেতের ঝাড়ে, জেলে-নৌকোর খয়েরি রঙের পালে, বাঁশঝাড়ের কচি ডালের চিকন পাতায়, কাঠালগাছের মসৃণ-ঘন সবুজে, ওপারের বালুতটের ফ্যাকাশে হলদেয়— সমস্তর সঙ্গে নানাভাবে মিশিয়ে সেই আলাে একটি চিরপরিচিত রূপ পেয়েছিল। কলকাতার এই সব অপরিচিত বাড়ির ছাদে দেয়ালে কঠিন অনম্র রেখার আঘাতে নানাখানা হয়ে সেই চিরদিনের আকাশ আলাে তাকে বেগানা লােকের মতাে কড়া চোখে দেখে। এখানকার দেবতাও তাকে একঘরে করেছে।

 বিপ্রদাস তাকে কেদারার কাছে টেনে নিয়ে বলে, “কী কুমু, মন কেমন করছে?”

 কুমুদিনী হেসে বলে, “না দাদা, একটুও না।”

 “যাবি বােন, ম্যুজিয়ম দেখতে?”

 “হ্যাঁ, যাব।”

 এত বেশি উৎসাহের সঙ্গে বলে যে, বিপ্রদাস যদি পুরুষমানুষ না হত তবে বুঝতে পারত যে এটা স্বাভাবিক নয়। ম্যুজিয়মে না যেতে হলেই সে বাঁচে। বাইরের লােকের ভিড়ের মধ্যে বেরােনাে অভ্যেস নেই বলে

২৬