পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

রাখবার জন্যে যাকে যোগ্যতার কোনাে প্রমাণ দিতে হয় না, সেখানে সংসারে সে কেবলই হীনতার সৃষ্টি করে। এ-কথা তােকে অনেকবার বলেছি, তাের সংস্কার তুই কাটাতে পারিস নি, কষ্ট পেয়েছিস। তুই যখন বিশেষ করে ব্রাহ্মণভোজন করাতিস, কোনোদিন বাধা দিই নি, কেবল বার বার বােঝাতে চেষ্টা করেছি, অবিচারে কোনাে মানুষের শ্রেষ্ঠতা স্বীকার করে নেওয়ার দ্বারা শুধু যে তারই অনিষ্ট তা নয়, তাতে করে সমাজের শ্রেষ্ঠতার আদর্শকেই খাটো করে। এ-রকম অন্ধ শ্রদ্ধার দ্বারা নিজেরই মনুষ্যত্বকে অশ্রদ্ধা করি এ-কথা কেউ ভাবে না কেন? তুই তাে ইংরেজি সাহিত্য কিছু কিছু পড়েছিস, বুঝতে পারছিস নে, এই রকম যত দলগড়া শাস্ত্রগড়া নির্বিকার ক্ষমতার বিরুদ্ধে সমস্ত জগতে আজ লড়াইয়ের হাওয়া উঠেছে। যত-সব ইচ্ছাকৃত অন্ধ দাসত্বকে বড়াে নাম দিয়ে মানুষ দীর্ঘকাল পােষণ করেছে, তারই বাসা ভাঙবার দিন এল।”

 কুমু মাথা নিচু করেই বললে, “দাদা, তুমি কি বল স্ত্রী স্বামীকে অতিক্রম করবে?”

 “অন্যায় অতিক্রম করা মাত্রকেই দোষ দিচ্ছি। স্বামীও স্ত্রীকে অতিক্রম করবে না—এই আমার মত।”

 “যদি করে, স্ত্রী কি তাই ব’লে—”

 কুমুর কথা শেষ না হতেই বিপ্রদাস বললে, “স্ত্রী যদি সেই অন্যায় মেনে নেয় তবে সকল স্ত্রীলােকের প্রতিই তাতে করে অন্যায় করা হবে। এমনি করে প্রত্যেকের দ্বারাই সকলের দুঃখ জমে উঠেছে। অত্যাচারের পথ পাকা হয়েছে।”

 মোতির মা একটু অধৈর্যের স্বরেই বললে, “আমাদের বউরানী সতীলক্ষ্মী, অপমান করলে সে অপমান ওঁকে স্পর্শ করতেও পারে না।”

 বিপ্রদাসের কণ্ঠ এবার উত্তেজিত হয়ে উঠল, “তােমরা সতীলক্ষ্মীর

২৬৫