বিপ্রদাস কিছুই বললে না, চুপ করে বসে রইল।
সেই ওর চুপ করে বসে থাকাটাও কুমুকে কষ্ট দিলে। কুমু জানে কথা বলার চেয়েও এর ভার অনেক বেশি।
ঘর থেকে বেরিয়ে এসে মোতির মা কুমুকে জিজ্ঞাসা করলে, “কী ঠিক করলে বউরানী?”
কুমু বললে, “যেতে পারব না। তা ছাড়া, আমাকে তো ফিরে যাবার অনুমতি দেন নি।”
মোতির মা মনে মনে কিছু বিরক্তই হল। শ্বশুরবাড়ির প্রতি ওর শ্রদ্ধা যে বেশি তা নয়, তবু শ্বশুরবাড়ি সম্বন্ধে দীর্ঘকালের মমত্ববোধ ওর হৃদয়কে অধিকার করে আছে। সেখানকার কোনো বউ যে তাকে লঙ্ঘন করবে এটা তার কিছুতেই ভালো লাগল না। কুমুকে যা বললে তার ভাবটা এই, পুরুষমানুষের প্রকৃতিতে দরদ কম আর তার অসংযম বেশি, গোড়া থেকেই এটা তো ধরা কথা। সৃষ্টি তো আমাদের হাতে নেই, যা পেয়েছি তাকে নিয়েই ব্যবহার করতে হবে। “ওরা ওই রকমই” বলে মনটাকে তৈরি করে নিয়ে যেমন করে হোক সংসারটাকে চালানোই চাই। কেননা সংসারটাই মেয়েদের। স্বামী ভালোই হোক মন্দই হোক,সংসারটাকে স্বীকার করে নিতেই হবে। তা যদি একেবারে অসম্ভব হয় তাহলে মরণ ছাড়া আর গতিই নেই।
কুমু হেসে বললে, “না-হয় তাই হল। মরণের অপরাধ কী?”
মোতির মা উদ্বিগ্ন হয়ে বলে উঠল, “অমন কথা বোলো না।”
কুমু জানে না অল্পদিন হল ওদেরই পাড়াতে একটি সতেরো বছরের বউ কার্বলিক অ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যা করেছিল। তার এম. এ. পাশ করা স্বামী—গবর্মেণ্ট আপিসে বড়ো চাকরি করে। স্ত্রী খোঁপায় গোঁজবার একটা রুপোর চিরুনি হারিয়ে ফেলেছে, মার কাছ থেকে এই নালিশ শুনে