পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 কুমু বললে, “দাদা, তোমার পায়ে পড়ি, এখন কালুদাকে না, একটু ঘুমোবার চেষ্টা করে।”

 বিপ্রদাস কিছু না বলে সুগভীর বেদনার দৃষ্টিতে কুমুর মুখের দিকে চেয়ে রইল। খানিক বাদে নিশ্বাস ফেলে আবার চোখ বুজলে। কুমু ধীরে ধীরে বেরিয়ে গিয়ে দরজা দিল ভেজিয়ে।

 একটু পরেই কালু খবর পাঠাল যে আসতে চায়। বিপ্রদাস উঠে তাকিয়ায় হেলান দিয়ে বসল। কালু বললে, “জামাই এসে অল্পক্ষণ পরেই তো চলে গেল। কী হল বলো তো। কুমুকে ওদের ওখানে ফিরে নিয়ে যাবার কথা কিছু বললে কি?”

 “হাঁ। বলেছিল। কুমু তার জবাব দিয়েছে, সে যাবে না।”

 কালু বিষম ভীত হয়ে বললে, “বল কী দাদা! এ যে সর্বনেশে কথা!”

 “সর্বনাশকে আমরা কোনোকালে ভয় করি নে, ভয় করি অসম্মানকে।”

“তা হলে তৈরি হও, আর দেরি নেই। রক্তে আছে, যাবে কোথায়। জানি যে, তোমার বাবা ম্যাজিস্ট্রেটকে তুচ্ছ করতে গিয়ে অন্তত দু-লাখ টাকা লোকসান করেছিলেন। বুক ফুলিয়ে নিজের বিপদ ঘটানো, ও তোমাদের পৈতৃক শখ। ওটা অন্তত আমার বংশে নেই, তাই তোমাদের সাংঘাতিক পাগলামিগুলো চুপ করে সইতে পারি নে। কিন্তু বাঁচব কী করে?”

 বিপ্রদাস উঁচু বাঁ হাঁটুর উপর ডান পা তুলে দিয়ে তাকিয়ায় মাথা রেখে চোখ বুজে খানিকক্ষণ ভাবলে। অবশেষে চোখ খুলে বললে, “দলিলের শর্ত অনুসারে মধুসূদন ছ-মাস নোটিশ না দিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা দাবি করতে পারে না। ইতিমধ্যে সুবোধ আষাঢ় মাসের মধ্যেই এসে পড়বে— তখন একটা উপায় হতে পারবে।

২৮৮