পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 গােপনে কুমুকে গিয়ে বললে, “দিদি, তােমার কথা বড়োবাবু শােনেন। বারণ করো তাঁকে, এটা অন্যায় হচ্ছে।”

 বিপ্রদাসকে বাড়ির সকলেই ভালােবাসে। কারও জন্যে বড়ােরাবু যে নিজের স্বত্ব নষ্ট করবে এ ওদের গায়ে সয় না।

 বেলা হয়ে যায়। বিপ্রদাস ওই তালুকের কাগজ পত্র নিয়ে ঘাঁটছে। এখনও স্নানাহার হয় নি। কুমু বারে বারে তাকে ডেকে পাঠাচ্ছে। শুকনাে মুখ করে এক সময়ে অন্দরে এল। যেন বাজে-ছোঁয়া পাতা ঝলসানাে গাছের মতাে। কুমুর বুকে শেল বিঁধল।

 স্নানাহার হয়ে গেলে পর বিপ্রদাস আলবােলার নল-হাতে খাটের বিছানায় পা ছড়িয়ে তাকিয়া ঠেসান দিয়ে বসল যখন, কুমু তার শিয়রের কাছে বসে ধীরে ধীরে তার চুলের মধ্যে হাত বুলােত বুলােত বললে, “দাদা, তােমার তালুক তুমি পত্তনি দিতে পারবে না।”

 “তােকে নবাব সিরাজউদ্দৌলার ভূতে পেয়েছে নাকি? সব কথাতেই জুলুম?”

 “না দাদা, কথা চাপা দিও না।”

 তখন বিপ্রদাস আর থাকতে পারলে না, সােজা হয়ে উঠে বসে কুমুকে শিয়রের কাছ থেকে সরিয়ে সামনে বসালে। রুদ্ধ স্বরটাকে পরিষ্কার করবার জন্যে একটুখানি কেশে নিয়ে বললে, “সুবােধ কী লিখেছে জানিস? এই দেখ্।”

 এই বলে জামার পকেট থেকে তার চিঠি বের করে কুমুর হাতে দিলে। কুমু সমস্তটা পড়ে দুই হাতে মুখ ঢেকে বললে, “মাগাে, ছােড়দাদা এমন চিঠিও লিখতে পারলে?”

 বিপ্রদাস বললে, “ওর নিজের সম্পত্তি আর আমার সম্পত্তিতে ও যখন আজ ভেদ করে দেখতে পেরেছে, তখন আমার তালুক আমি কি আর

৩২