পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

বিড়ালটা বালাপােশের একটা ফালতো অংশ দখল করে গােলাকার হয়ে নিদ্রামগ্ন। বিপ্রদাসের টেরিয়র কুকুরটা অগত্যা ওর স্পর্ধা সহ্য করে মনিবের পায়ের কাছে শুয়ে স্বপ্নে এক-এক বার গোঁ গোঁ করে উঠছে।

 এমন সময়ে এল আর-এক ঘটক।

 “নমস্কার।”

 “কে তুমি।”

 “আজ্ঞে, কর্তারা আমাকে খুবই চিনতেন, (মিথ্যে কথা) আপনারা তখন শিশু। আমার নাম নীলমণি ঘটক, ৺গঙ্গামণি ঘটকের পুত্র।”

 “কী প্রয়ােজন?”

“ভালাে পাত্রের সন্ধান আছে। আপনাদেরই ঘরের উপযুক্ত।”

 বিপ্রদাস একটু উঠে বলল। ঘটক রাজাবাহাদুর মধুসূদন ঘােষালের নাম করলে।

 বিপ্রদাস বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলে, “ছেলে আছে না কি?”

 ঘটক জিভ কেটে বললে, “না তিনি বিবাহ করেন নি। প্রচুর ঐশ্বর্য। নিজে কাজ দেখা ছেড়ে দিয়েছেন, এখন সংসার করতে মন দিয়েছেন।”

 বিপ্রদাস খানিকক্ষণ বসে গুড়গুড়িতে টান দিতে লাগল। তার পরে হঠাৎ এক সময়ে একটু যেন জোর করে বলে উঠল, “বয়সের মিল আছে এমন মেয়ে আমাদের ঘরে নেই।”

 ঘটক ছাড়তে চায় না, বরের ঐশ্বর্যের যে পরিমাণ কত, আর গবর্নরের দরবারে তার আনাগােনার পথ যে কত প্রশস্ত ইনিয়ে-বিনিয়ে তাই ব্যাখ্যা করতে লাগল।

 বিপ্রদাস আবার স্তম্ভিত হয়ে বসে রইল। আবার অনাবশ্যক বেগের সঙ্গে বলে উঠল, “বয়সে মিলবে না।”

৩৪