পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

মধ্যে তর্ক করবার জায়গা নয়—তাই কেবল বললে, “ঘাটে বজরা তৈরি।”

 রাজা বললে, “দরকার হবে না, আমাদের স্টীমলঞ্চ এসেছে।”

 বিপ্রদাস বুঝলে সুবিধে নয়। তবু আর-একবার বললে, “খাওয়া-দাওয়ার জিনিস-পত্র, রসুইয়ের নৌকো সমস্তই প্রস্তুত।”

 “কেন এত উৎপাত করলেন! কিছুই দরকার হবে না। দেখুন, একটা কথা মনে রাখবেন, এসেছি আমার পূর্বপুরুষদের জন্মভূমিতে— আপনাদের দেশে না। বিয়ের দিনে সেখানে যাবার কথা।”

 বিপ্রদাস বুঝলে কিছুতেই নরম হবার আশা নেই। বুকের ভিতরটা দমে গেল। স্টেশনের বসবার ঘরে কেদারায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। শীতের সন্ধ্যা, অন্ধকার হয়ে এসেছে। উত্তর থেকে গাড়ি আসবার জন্যে ঘণ্টা পড়ল, স্টেশনে আলো জ্বলল,—লাগাম ছেড়ে ঘোড়াকে নিজের মরজিমতো চলতে দিয়ে বিপ্রদাস যখন বাড়ি ফিরলে তখন যথেষ্ট রাত। কোথায় গিয়েছিল, কী ঘটেছিল, কাউকে কিছুই বললে না।

 সেইদিন রাত্রে ওর ঠাণ্ডা লেগে কাশি আরম্ভ হল। ক্রমেই চলল বেড়ে। উপেক্ষা করতে গিয়ে ব্যামোটাকে আরও উসকে তুললে। শেষকালে কুমু ওকে অনেক ধরে কয়ে এনে বিছানায় শোওয়ায়। অনুষ্ঠানের সমস্ত ভারই পড়ল নবগোপালের উপর।


১৬

 দু-দিন পরেই নবগোপাল এসে বললে, “কী করি একটা পরামর্শ দাও।”

 বিপ্রদাস ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলে, “কেন? কী হয়েছে?”

 “সঙ্গে গোটাকতক সাহেব,—দালাল হবে, কিংবা মদের দোকানের বিলিতি শুঁড়ি, কাল পীরপুরের চরের থেকে কিছু না হবে তো দু-শ

৫০