পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

সইবে না। শুষ্ক গলায় জোর করেই বললে, “দেখো, এ আংটি তোমাকে খুলতেই হবে।”

 কুমুদিনী মাথা হেঁট করে চুপ করে রইল, তার মুখ লাল হয়ে উঠেছে।

 মধুসূদন আবার বললে, “শুনছ? আমি বলছি ওটা খুলে ফেলা ভালো। দাও আমাকে।” বলে হাতটা টেনে নিতে উদ্যত হল।

 কুমু হাত সরিয়ে নিয়ে বললে, “আমি খুলছি।”

 খুলে ফেললে।

 “দাও ওটা আমাকে দাও।”

 কুমুদিনী বললে, “ওটা আমিই রেখে দেব।”

 মধুসূদন বিরক্ত হয়ে হেঁকে উঠল, “রেখে লাভ কী? মনে ভাবছ, এটা ভারি একটা দামি জিনিস! একিছুতেই তোমার পরা চলবে না, বলে দিচ্ছি।”

 কুমুদিনী বললে, “আমি পরব না।” বলে সেই পুঁতির কাজ-করা থলেটির মধ্যে আংটি রেখে দিলে।

 “কেন, এই সামান্য জিনিসটার উপরে এত দরদ কেন? তোমার তো জেদ কম নয়।”

 মধুসূদনের আওয়াজটা খরখরে; কানে বাজে, যেন বেলে-কাগজের ঘর্ষণ। কুমুদিনীর সমস্ত শরীরটা রী রী করে উঠল।

 “এ আংটি তোমাকে দিলে কে?”

 কুমুদিনী চুপ করে রইল।

 “তোমার মা নাকি?”

 নিতান্তই জবাব দিতে হবে বলেই অর্ধস্ফুটস্বরে বললে, “দাদা”।

 দাদা! সে তো বোঝাই যাচ্ছে। দাদার দশা যে কী, মধুসূদন তা ভালোই জানে। সেই দাদার আংটি শনির সিঁধকাঠি— এ ঘরে আনা

৭২