পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

চলবে না। কিন্তু তার চেয়েও ওকে এইটেই খোঁচা দিচ্ছে যে, এখনও কুমুদিনীর কাছে ওর দাদাই সব চেয়ে বেশি। সেটা স্বাভাবিক বলেই যে সেটা সহ্য় হয় তা নয়। পুরােনাে জমিদারের জমিদারি নতুন ধনী মহাজন নিলেমে কেনার পর ভক্ত প্রজারা যখন সাবেক আমলের কথা স্মরণ করে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলতে থাকে তখন আধুনিক অধিকারীর গায়ের জ্বালা ধরে, এও তেমনি। আজ থেকে আমিই যে ওর একমাত্র, এই কথাটা যত শীঘ্র হােক ওকে জানান দেওয়া চাই। তাছাড়া গায়ে-হলুদের খাওয়ানাে নিয়ে বরের যা অপমান হয়েছে তাতে বিপ্রদাস নেই এ-কথা মধুসূদন বিশ্বাস করতেই পারে না। যদিও নবগােপাল বিবাহের পরদিনে ওকে বলেছিল, “ভায়া, বিয়েবাড়িতে তােমাদের হাটখােলার আড়ত থেকে যে-চালচলন আমদানি করেছিলে, সে-কথাটা ইঙ্গিতেও দাদাকে জানিয়ো না; উনি এর কিছুই জানেন না, ওঁর শরীরও বড়ো খারাপ।”

 আংটির কথাটা আপাতত স্থগিত রাখলে, কিন্তু মনে রইল।

 এদিকে রূপ ছাড়া আরও একটা কারণে হঠাৎ কুমুদিনীর দর বেড়ে গিয়েছে। নুরনগরে থাকতেই ঠিক বিবাহের দিনে মধুসূদন টেলিগ্রাফ পেয়েছে যে এবার তিসি চালানের কাজে লাভ হয়েছে প্রায় বিশ লাখ টাকা। সন্দেহ রইল না, এটা নতুন বন্ধুর পয়ে। স্ত্রীভাগ্যে ধন, তার প্রমাণ হাতে হাতে। তাই কুমুকে পাশে নিয়ে গাড়িতে বসে ভিতরে ভিতরে এই পরম পরিতৃপ্তি তার ছিল যে, ভাবী মুনফার একটা জীবন্ত বিধিদত্ত দলিল নিয়ে বাড়ি চলেছে। এ নইলে আজকের এই ব্রুহাম-রথযাত্রার পালাটায় অপঘাত ঘটতে পারত।

৭৩