মুখ দেখে কি বুঝতে পারি নে? তা দোষ দেব না তােমাকে। ও আমাদের আপন বলেই কি চোখের মাথা খেয়ে বসেছি? বড়াে শক্ত হাতে পড়েছ বউ, বুঝে সুঝে চ’লো?”
এমন সময় মােতির মাকে ঘরে ঢুকতে দেখেই বলে উঠল, “ভয় নেই, ভয় নেই, বকুলফুল, যাচ্ছি আমি। ভাবলুম তুমি নেই এই ফাঁকে আমাদের নতুন বউকে একবার দেখে আসি গে। তা সত্যি বটে, এ কৃপণের ধন, সাবধানে রাখতে হবে। সইকে বলছিলুম আমাদের দেওরের এ যেন হল আধ-কপালে মাথাধরা; বউকে ধরেছে ওর বাঁ-দিকের পাওয়ার-কপালে, এখন ডানদিকের রাখার-কপালে যদি ধরতে পারে তবেই পুরােপুরি হবে।
এই বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে মূহূর্ত পরে ঘরে ঢুকে কুমুর সামনে পানের ডিবে খুলে ধরে বললে, “একটা পান নেও। দোক্তা খাওয়া অভ্যেস আছে?”
কুমু বললে, “না।” তখন এক টিপ দোক্তা নিয়ে নিজের মুখে পুরে দিয়ে শ্যামা মন্দগমনে বিদায় নিলে।
“এখনই বদ্দিমাসিকে খাইয়ে বিদায় করে আসছি, দেরি হবে না” বলে মােতির মা চলে গেল।
শ্যামাসুন্দরী কুমুর মনের মধ্যে ভারি একটা বিস্বাদ জাগিয়ে দিলে। আজকে কুমুর সব চেয়ে দরকার ছিল মায়ার আবরণ, সেইটেই সে আপন মনে গড়তে বসেছিল, আর যে-সৃষ্টিকর্তা দ্যুলোকে ভূলােকে নানা রং নিয়ে রূপের লীলা করেন, তাঁকেও সহায় করবার চেষ্টা করছিল, এমন সময় শ্যামা এসে ওর স্বপ্ন-বােনা জালে ঘা মারলে। কুমু চোখ বুজে খুব জোর করে নিজেকে বলতে লাগল, “স্বামীর বয়স বেশি বলে তাঁকে ভালোবাসি নে এ-কথা কখনােই সত্য নয়— লজ্জা, লজ্জা! এ যে ইতর মেয়েদের মতাে