“শান্ত হও ভাই, ঠাট্টা করেছে তোমার সঙ্গে, আবার ফিরিয়ে দেবে।”
“নেব না ফিরিয়ে— দেখব কত অত্যাচার করতে পারে ও!”
“আচ্ছা, সে হবে পরে, এখন মুখে কিছু দেবে এস।”
“না, পারব না; এখানকার খাবার গলা দিয়ে নাববে না।”
“লক্ষ্মীটি ভাই, আমার খাতিরে খাও।”
“একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, আজ থেকে আমার নিজের বলে কিছুই রইল না?”
“না, রইল না। যা-কিছু রইল তা স্বামীর মর্জির উপরে। জান না চিঠিতে দাসী বলে দস্তখত করতে হবে।”
দাসী! মনে পড়ল, রঘুবংশের ইন্দুমতীর কথা—
গৃহিণী সচিবঃ সখী মিথঃ
প্রিয়শিষ্যা ললিতে কলাবিধৌ—
ফর্দের মধ্যে দাসী তো কোথাও নেই। সত্যবানের সাবিত্রী কি দাসী? কিংবা উত্তররামচরিতের সীতা?
কুমু বললে, “স্ত্রী যাদের দাসী তারা কোন্ জাতের লোক?”
“ও-মানুষকে এখনও চেন নি। ও যে কেবল অন্যকে গোলামি করায় তা নয়, নিজের গোলামি নিজে করে। যেদিন আপিসে যেতে পারে না নিজের বরাদ্দ থেকে সেদিনকার টাকা কাটা পড়ে। একবার ব্যামো হয়ে এক মাসের বরাদ্দ বন্ধ ছিল, তার পরের দু-তিন মাস খাইখরচ পর্যন্ত কমিয়ে লোকসান পুষিয়ে নিয়েছে। এতদিন আমি ঘরকন্নার কাজ চালিয়ে আসছি সেই অনুসারে আমারও মাসহারা বরাদ্দ। আত্মীয় বলে ও কাউকে মানে না। এ-বাড়িতে কর্তা থেকে চাকর-চাকরানী পর্যন্ত সবাই গোলাম।”