পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 “আচ্ছা, বেশ, তাহলে সরিয়ে নিয়েছে।”

 “না, আমিই ওকে দিয়েছি।”

 “এমনি করে ওর মাথা খেতে বসেছ বুঝি? একটা কথা মনে রেখো, আমার হুকুম ছাড়া জিনিসপত্র কাউকে দেওয়া চলবে না। আমি এলোমেলো কিছুই ভালোবাসি নে।”

 কুমু দাঁড়িয়ে উঠে বললে, “তুমি নাও নি আমার নীলার আংটি?”

 মধুসূদন বললে, “হাঁ নিয়েছি।”

 “তাতেও তোমার ওই কাঁচের ঢেলাটার দাম শোধ হল না?”

 “আমি তো বলেছিলুম, ওটা তুমি রাখতে পারবে না।”

 “তোমার জিনিস তুমি রাখতে পারবে, আর আমার জিনিস আমি রাখতে পারব না?”

 “এ-বাড়িতে তোমার স্বতন্ত্র জিনিস বলে কিছু নেই।”

 “কিছু নেই? তবে রইল তোমার এই ঘর পড়ে।”

 কুমু যেই গেছে, ব্যস্তসমস্ত হয়ে শ্যামা ঘরে প্রবেশ করে বললে, “বউ কোথায় গেল?”

 “কেন?”

 “সকাল থেকে ওর খাবার নিয়ে বসে আছি, এ-বাড়িতে এসে বউ কি খাওয়াও বন্ধ করবে?”

 “তা হয়েছে কী? নুরনগরের রাজকন্যা না হয় নাই খেলেন? তোমরা কি ওঁর বাঁদী নাকি।”

 “ছি ঠাকুরপো, ছেলেমানুষের উপর অমন রাগ করতে নেই। এমন না খেয়ে খেয়ে কাটাবে এ আমরা সহ্য করতে পারি নে। সাধে সেদিন মুর্ছো গিয়েছিল?”

৯৫