পাতা:যৌবনের বজ্রনির্ঘোষ - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
যৌবনের বজ্রনির্ঘোষ

যেতে হত। কোনও দিনই লেখক হওয়ার সুযোগ পেতাম না।

 এরপর ’৫৫ তে চলে আসি খড়্গপুরে। রেলশহর। রেলওয়ে কর্মচারীর সংখ্যা হাজার হাজার। নাটক করার কয়েকটি ক্লাব ছিল। কেউ কেউ নিজের চেষ্টায় মাঝারি মাপের গায়কও হয়েছিলেন।

 খড়্গপুর থেকে কলকাতায় না এলে আমিও আমার লেখাকে একটুও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম না।

 ব্যতিক্রমী কয়েকজন লেখক মফস্‌সল থেকে উঠে এসেছেন, সেটা ব্যতিক্রম ছাড়া কিছু নয়। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য নাম হল রমাপদ চৌধুরী।

 যেখানে যে সংস্কৃতি চালু আছে, সেখানের সেই সংস্কৃতির প্রভাব মানুষের ওপর পড়বেই।

 আগে আমি গল্প লিখতাম। কিন্তু, আমার রাজনৈতিক সচেতনতা গল্প লেখার থেকে সমাজ সচেতন প্রবন্ধ লেখার দিকে টেনে নিয়ে এল। রাজনীতির বীজটা পুঁতেছিলেন স্কুলের শিক্ষক শুভেন্দুকুমার রায়। সেই বীজ থেকে অঙ্কুরোদ্গম হল ১৯৬০ সালে কলকাতায় এসে।

এলাম কলকাতায়

বাবা অবসর নিলেন। আমারও স্কুলের পাঠ শেষ হল। আমরা এলাম কলকাতার এক রিফিউজি কলোনিতে।

 এসেই মন খারাপ। কলোনির ধু ধু প্রান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কয়েকটা বাড়ি। এখানেই শেষ জীবনটা কাটাতে হবে।

 জায়গাটার নাম কৃষ্ণপুর কো-অপারেটিভ রিফিউজি কলোনি, যার বর্তমান নাম দমদম পার্ক।

 এখানে বাবা একতলা বাড়ি বানালেন। গাছগাছালি পুঁতলেন। দুটো নারকেল গাছ। দুটো হিমসাগর জামের গাছ। একটা কাঁঠাল গাছ। পেয়ারা, করমচা ইত্যাদি গাছে ভরে গেল বাগান।

 আড়াইখানা বেডরুম। খুদে ডাইনিংরুম একটা। একটা ছোট্ট রান্নাঘর। দুটো পায়খানা, একটা বাথরুম। সামনে একটা খোলা বারান্দা। এখানেই সাতজনের বসবাস শুরু হল।

 এই বাড়িটা তৈরি করার আগে ভাড়া থাকতাম এ’পাড়াতেই। বাগজোলা খালের দিকে কলোনির শেষ প্রান্তে ধীরেন ব্যানার্জির বাড়িতে। ব্যানার্জিকাকু লম্বা, গায়ের রং টকটকে ফর্সা। তিনি একটা গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ভাল অভিনয় করতেন। রেলে চাকরি করতেন। তাঁর ছোটভাই ময়নাকাকুর কাছেই আমি সাঁতার শিখলাম।