পাতা:রংপুর সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (সপ্তম ভাগ).pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩১৯, ৩য় সংখ্যা ] ন্যায় ও বৈশেষিক দর্শনে পরমাণুতত্ত্ব Y 0 পরমাণু যে অতি সূক্ষ্ম এক প্রকার পদাৰ্থ আর এই পদার্থ হইতে নিখৰ জন্যমূৰ্ত্তের উৎপত্ত্বি হয়।-এই মত মহর্ষি গৌতম ও কণাদ কর্তৃক প্রথম প্ৰকাশিত হয় ; উক্ত মহর্ষিদ্বয় অনুমান এবং নানা প্রকার যুক্তি দ্বারা পরমাণুর অস্তিত্ব, নিত্যত্ব ও মূলোপাদানতা প্ৰভৃতি উত্তমরূপে সংস্থাপন করিয়া তৎপ্রসঙ্গে নানা প্ৰকার প্রয়োজনীয় বিষয়ের উল্লেখ করিয়াছেন । অন্যান্য দর্শনে পরমাণু স্বীকৃত হয় নাই ; অন্যান্য দার্শনিকের এই মতের প্রতি দোষারোপ করিয়া প্ৰকারান্তরে সৃষ্টি বর্ণনা করিয়াছেন। এ প্ৰবন্ধে উহা অনালোচ্য। পরমাণু অতীন্দ্ৰিয়বিষয়, কেবল অনুমানসাধ্য। অনুমানদ্বারা অতীন্দ্ৰিয়বিষয় প্রতিপাদন করিতে হইলে নানা প্ৰকার দোষের সম্ভাবনা থাকিতে পারে ; কিন্তু তাহা হইলেই যে সর্বসাধারণের উপযোগী সহৃদয়-হৃদয় গ্রাহিমত অপ্ৰামাণিক হইবে বা এই দোষ নির্যাকরণের উপায় হইবে না, এরূপ বিবেচনা করা নিতান্ত অসঙ্গত। যদিচ মূল গ্রন্থে অতি সংক্ষেপে পরমাণুর বিষয় বর্ণিত আছে, তথাপি র্যাহারা সম্পূর্ণরূপে এই গ্রন্থের তাৎপৰ্য্য হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিয়াছেন, তাহারা পরমাণু প্ৰতিপন্ন করিতে পরামুখ হইবেন না। একথা সত্য—বহুকাল অবধি এতদ্দেশে মূল গ্ৰন্থ অপ্রচলিত থাকায় পরমাণু প্রভৃতি পদার্থের তােদৃশ অনুশীলন নাই বলিলেও চলে, এ জন্য অতি সামান্য বিপ্রতিপত্তি উপস্থিত হইলেও আমাদের দ্বারা মীমাংসা দুষ্কর হইয়া উঠে। যদি মূল গ্রন্থের অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা থাকিত আর পণ্ডিতেরা মহর্ষিগণের অভিপ্ৰায় অনুসারে পরমাণুনিরূপণ গ্রন্থ প্ৰস্তুত করিয়া ক্ৰমে এই মতের উন্নতিসাধন করিতেন, তাহা হইলে আর কোন বিপ্ৰতিপত্তির অবতারণা থাকিত না । নৈয়ায়িকেরা কোন কোন বিষয়ে বুদ্ধিমত্তার পরাকাষ্ঠা দেখাইয়াছেন এবং কোন কোন অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে ও বহুতর পরিশ্রম স্বীকার করিয়াছেন ; আক্ষেপের বিষয় এই যে, পরমাণু প্ৰতিপাদন করা অতীব প্রয়োজনীয়এই বিষয়ে কিঞ্চিৎ পরিশ্রম স্বীকার করিয়া একথানি ক্ষুদ্র গ্রন্থ ও রচনা করেন নাই । পণ্ডিত বর বিশ্বনাথ ন্যায়পঞ্চানন প্ৰথম পাঠার্থীর শিক্ষার নিমিত্ত মুক্তাবলী গ্রন্থে অতি সংক্ষেপে পরমাণুর কিঞ্চিৎ বিবরণ দিয়াছেন, তাহাঁই এক্ষণে আমাদের প্রায়- সকলেরই . একমাত্র অবলম্বনীয় হইয়াছে প্ৰত্যুত ইহাদ্বারা, আমাদের কেবল সামাজিক - কাৰ্য্য নিৰ্বাহ হইতে পারে ; কিন্তু তত্ত্ববুভুৎসুদিগের বিশেষ জানলাভ হইতে পারে না এবং বুদ্ধিমান পাঠকদিগের আকাজক্ষানিবৃত্তি হইতে পারে না । একশ্রেণীর, পণ্ডিতগণ ছয় পরমাণুজন্য ত্ৰ্যসরেণুর চক্ষুষ প্ৰত্যক্ষ স্বীকার করিয়া পরমাণুর অনুমান করিয়াছেন ; আমাদের স্কুল দৃষ্টিতে ছয় পরমাণুজন্য ত্ৰ্যসরেণুর চাক্ষুষ হওয়া দূরে থাকুক, ছয় লক্ষ পরমাণুজন্য। অণুর চাক্ষুষ হয় কি না,—ইহাই সম্পূর্ণ সন্দিগ্ধস্থল ; সুতরাং বিশুদ্ধরূপে পরমাণুর নিরূপণ করিয়া শ্ৰোতৃবর্গের মনোরঞ্জন করিতে পারিব, এরূপ প্ৰত্যাশা কখনই করিতে পারি না । যদ্যপি কোন কোন প্ৰাচীন গ্রন্থেও এই মতের উল্লেখ দেখা যায়, তথাপি গৌতমসূত্র বা কণাদসূত্রে এ প্রকার ত্র্যসরেণুর নাম-গন্ধও পাওয়া যায় না। বোধ হয় কোন কোন প্ৰাচীন নৈয়ায়িক সম্প্রদায় ঐ মত স্থাপন করিয়াছেন ; আজিও ঐ মতের অনুসারেই পরমাণুর সম্বন্ধে যাহা বক্তব্য অকাঁহ বলিব ।