পাতা:রংপুর সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (সপ্তম ভাগ).pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e bro রঙ্গপুর-সাহিত্য-পরিষৎ পত্রিকা আমাদের যে প্রকার অবস্থা, ইহাতে ন্যায় ও বৈশেষিকদর্শনের পদার্থতিত্বের পরমাণুনিরূপণ অনেক অংশেই অসম্পূর্ণ থাকিতে পারে, তথাপি উপাদান সংগ্ৰহ করিয়া যথাসাধ্য যোজনা করিতে আরম্ভ করিলাম, সঙ্গদয় সভ্যশ্রোতৃবর্গ রূপা পূর্বক মনোযোগ সহ শ্রবণ করিলে চরিতার্থ হইব ও আমার ভ্রম দেখাইয়া দিয়া কৃতাৰ্থ করিতে ক্ৰটী করিবেন না—ইতাই একান্ত প্রার্থনা। প্রকৃত মনুসরামঃ-যে বস্তু নিরবয়ব অথচ পরম্পর। সমুদয় জন্য-দ্রব্যের অবয়ব হয়, তাহারই নাম পরমাণু ; পরমাণু অতীন্দ্ৰিয় এবং সমৃদয় ক্ষুদ্র বস্তুর শেষ সীমা স্বরূপ ; জগতে পরমাণু অপেক্ষ। কিছুই ক্ষুদ্র নহে, এজন্য পরমাণুকে সূক্ষ্মতম বলা হইয়াছে—পরমাণু কি প্রকার সুন্ম তাহ নিশ্চয় করা যায় না । দেখুন। অতি বিস্তুত গৃহে একটি কস্তারী রাখিলে গৃহের সমস্ত অংশেই কস্তারীর গন্ধ অনুভূত হইয়া থাকে, ইহাতে স্পষ্টই বোপ হইতে পারে যে, কস্তারীর সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অণুসমূহ সঞ্চালিত হইয়া সমস্ত গৃহে অণুর সম্বন্ধ হইয়াছে। যদি গৃহের সকল অংশেই অণুর সম্বন্ধ থাকিল, তবে এই সকল অণু ও অসংখ্য হইল ; কিন্তু অসংখ্য অণুর অভাবে কস্ত বীর গুরুত্ব বা পরিমাণের কোন বৈলিক্ষণ্য দেখা যায় না । , এমন কি, যদি বহু দিন পৰ্য্যন্ত কস্তারীকে এই ভাবে রাখা যায় ও প্রতিক্ষণে অসংখ্য অণু স্বতন্ত্র হইয়া যায়, তথাপি কিছুমাত্র বৈলক্ষণ্য হইবে না। এস্থলে কস্তারীর কি পরিমিত অংশ পৃথকৃভূত হইয়া কত অংশে বিভক্ত হইয়াছে আর এই সকল অংশই বা কত সূক্ষ্ম, ইহা কে বলিতে পারে। বরং কল্পনামাত্ৰ করিতে হইলে ও নানা বিষয়ে সংশয়ারূঢ় হইতে হয় ; যে বস্তুর এত সূক্ষ্ম পরিমাণ যে, অন্তঃকরণ কল্পিত মাত্র ও হইতে পারে না, সে বস্তু কি স্পষ্ট ইন্দ্ৰিয় গ্ৰাহা হইবে ? এই এক একটি অণু যে একটা পরমাণুস্বরূপ, তাহাও বলা যায় না ; যেহেতু নৈয়ায়িকের বলেন,-পরমাণুর রূপ রস গন্ধ প্রভৃতি গুণের প্রত্যক্ষ হয় না, এই অণুর গন্ধ বি লক্ষণ প্রত্যক্ষ সিদ্ধ,-কিন্তু এই এক একটি অণুতে কত পরমাণু আছে বা এই অণু কত অংশে বিভক্ত হইতে পারে, ইহা সাধারণ লোকের বুদ্ধিগম্য নহে। পরমাণু প্ৰত্যক্ষসিদ্ধ না হইলেও অনুমান দ্বারা পরমাণুর সূক্ষ্মতমত্ব সিদ্ধ হইতে পারে। দেখুন বিভাজ্য দ্রব্যের অবয়ববিভাগ হইলে এক প্রকার তারতম্য হইয়া থাকে (མུ༢f།༤ অৱয়ববিভাগ হইলে ক্ৰমেই ক্ষুদ্রতর ও ক্ষুদ্রতম হইয়া থাকে ) ; ক্ষুদ্র একখণ্ড মৃত্তিকা দুই অংশে বিভক্ত হইলে পূর্বে যে প্রকার ক্ষুদ্র ছিল তদপেক্ষা কিঞ্চিদধিক ক্ষুদ্র হইল, উহাকে ক্ষুদ্রতর বলা যায় ; কিন্তু এই বস্তু পুনরায় বিভাগ হওয়ায় প্রকৃত ক্ষুদ্রতমও হইতে পারে না। যেহেতু উহারও বিভাগ হইয়া তারতম্য হইতে পারে। এইরূপ ক্রমে তারতম্য হইতে হইতে এই অণুসমূহ চক্ষুরিন্দ্ৰিয়ের অতীত হইয়া যায়। কিন্তু তাহা হইলেই যে, অবিভাজ্য হয়, এমত নহে ; যেহেতু অনুমান দ্বারা উহারও বিভাজ্যতা স্থির হইতে পারে। যদি চক্ষুরিত্রিয়ের অতীত হইলেই অবিভাজ্য হয়, তবে কস্ত বীর তাদৃশ সূক্ষ্ম অণু সিদ্ধ হইত না । অতএব এই বস্তু যতক্ষণ পৰ্য্যন্ত বিভাজ্য অবস্থায় থাকিবে, ততক্ষণ উহাৱা অবয়ববিভাগ হইয়া ক্ৰমেই সূক্ষ্মতম হইবে। যখন অবয়ববিভাগ হইতে হইতে অবিভাজ্য হইয়া উঠে, তখন আর অবয়ৰ বিভাগের সম্ভাবনা থাকে না ; সুতরাং উহা অপেক্ষা আর ক্ষুদ্রতমও হইতে পারে না বলিয়া উহাকেই প্রকৃত ক্ষুদ্রতম বলিতে হয়। এই ক্ষুদ্রতমকেই পরমাণু বলা যায়।