পাতা:রক্তকরবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>S ○ চাবুকের বরাদ্দ সন্ধ্যাবেলায় মদের। আর তার পরে যখন দরকার ফুরোলে বাইরে ঠেলে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় তখন এমনি অভ্যেস খারাপ হয়ে গেছে যে মন বলতে থাকে চাবুকেও রাজি আছি কিন্তু মদ না হলে চলবে না | বেয়াই, তুমি কি বলচ, আমি ভাল বুঝিনে। আমি একটা কথা জানি, ও একদিন আমাকে ভালবাসত— মদের চেয়ে অনেক বেশি। তখন আমাদের মনে হত ওতে আমাতে মিললেই সব পূরো হয়ে যায় তার বাইরে আর কিছুই বাকি থাকে না। জগতে এইটুকুর বেশি আর কিছুই চাবার থাকে না। জানি জানি, যেমন জুইয়ের বেঁটার উপরে কেবল গুটি চার পাঁচ পাপড়ি ধরলেই বাস সমস্ত ভরপূর— তার পরে জুই ফুলের আর কিছুই কমানো বাড়ানো চলে না— তখন বর্ষার যে সন্ধ্যা তার সব তারা হারিয়ে বসেচে সেও এইটুকু জুয়েতেই পুলকিত হয়ে ওঠে, সেইরকম আর কি। জগতে সব কিছুতেই এই চাওয়াই ত চাওয়া । তবে আর কি ? তাই হোক না ! মদের ভাড় ফেলে দিয়েও আর একবার তেমনি করে আমাকে চাক না। তাহলে আমার মধ্যে যা কিছু আছে সব যে ঢেলে দিয়ে আমি বেঁচে যাই । জুইয়ের বেঁটা যদি মুচড়ে যায় তাহলে গাছের সঙ্গে ফুলের সহজ রসের আনাগোনা আর থাকে না | এখানে আমাদের যে বোটায় লেগেচে ঘা। তোমাদের দেওয়া নেওয়ায় তেমন করে কি আর কখনই জোড় মিলবে ? সেই জোড় ভাঙার দুঃখ মদ দিয়ে ডুবিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু বেয়াই, আমার দিকে ত কিছু বদল হয়নি। খুব হয়েচে, এখনো জানতে পারনি। এই যক্ষপুরীর মরু হাওয়ায় তোমার ফুলের মালা শুকিয়ে গেছে তুমি এখন সোনার হারের স্বপ্ন দেখচ। १ ছাড়িয়ে যাবে। লুপ্তি নেশার চরম সাথী, তোর ক্লান্ত আঁখি দিক সে ঢাকি দিক ভোলাবার ঘোরে । বন্ধ হবার সময় আসে তখন চোখের উপরে কালের উপরে নেশাঘরের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে আসে। তখন রঙীন আলোর প্রদীপ যায় নিবে, পেয়ালা যায় ফুরিয়ে, সব বাণীই হয় শান্ত, কেবল প্রকৃতি মহারানীর তোরণদ্বার থেকে অন্ধকারের ভিতর দিয়ে কেবল একটি বাণী বার বার শোনা যায় “তোমাকে আর দরকার নেই।”