পাতা:রক্তকরবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ ૨૨ আমার মনে হল, খেয়ে খেয়ে আর থাকতে পারিনে। শক্তি কেবল শক্তি খায়, আর বলে, আমি থাকব, আমি থাকব। কিছু কি হবে থেকে ? ক্ৰমাগতই এই থাকার পেট ভরিয়ে চলা, এ কি বীভৎস থাকা ? কেবল একদিন একরাত্রি খাওয়া বন্ধ করেছি আমনি দেখ আমার সব যেন মরা নদীর পাকের মত। তোমার ভয় হচ্চে ?” আমি বল্লুম, “না, না, আমার কিছু ভয় নেই ; আমি তোমাকে বাচাতে চাই, মা যেমন ছেলেকে বাচাতে চায় নিজেকে দিয়ে।” আমার কথা শুনে মন্ত ঐ স্থবির একটু যেন জোর পেলে । ব্যাকুল হয়ে বললে, “তুমি সত্যিই চাও যে আমি বঁচি ? তুমি যদি খুসি হও, তাহলে যেমন করে পারি আমি মরব না, মরব না । এখন যাও, আমি তোমাকে বলে রাখচি আমি বঁচিব ।” তারপরে আমি কতদিন ওর ঘরে গেচি, ফুল দিয়ে ওর ঘর সাজিয়ে এসেচি– আমার মনে হত ও লুকিয়ে কোথা থেকে আমাকে দেখত— কিন্তু আর আমাকে দেখা দেয়নি। পাগল ভাই, ওর উপরে দয়া হয় না তোমার ? যেদিন ওর পরে বিধাতার দয়া হবে সেদিন ও মরবে। কিন্তু তুমি জান না ও কি রকম বাঁচতে চায়। সেইজন্যেই ত ওর বাচাটা ভয়ঙ্কর। না, না, আমন কথা বোলো না। ওর বাঁচা বলতে যে কি বোঝায় সে আমি তোমাকে আজই দেখাব। জানিনে, সইতে পারবে কিনা। ঐ দেখ ছায়া। সর্দার আমাদের কথা শোনবার চেষ্টা করচে । ॐ বিশু বুঝতে পারচ না ? তুমি যে বললে, “জানিনে" অথচ সেই না-জানাকেই সব চুকিয়ে দিয়ে ফেলতে চাও ! এসব কথায় ওর মন চঞ্চল হলেই সব মাটি। ও পষ্ট কেবল জানার খদের, আঁকড়ে রাখার মালিক, তাই তোমাকে ও ভয় করে । নন্দিনী তারপরের দিন কি হয়েছিল জানিনে। ওর দরজা খোলাই ছিল, এমন কোনোদিন দেখিনি। হঠাৎ ঘরে ঢুকেই চমকে উঠলুম। সে কি চেহারা । মুখের চামড়া ঝুলে পড়েচে, চোখের পাতা তুলতে পারচে না, হাত দুটো পড়ে আছে যেন শাল গাছের ঝড়ে মুচকে পড়া ডাল। ওর শক্তি যেমন প্রকাণ্ড দেখেচি ওর নিঃশক্তিও তেমনি ভয়ঙ্কর বিপুল, তার ভার যেন পৃথিবী সইতে পারবে না এমনিতরো। আমি দুই হাতে চোখ ঢেকে বললুম, “তোমার এ চেহারা আমি দেখতে পারিনে।” সে বললে, “নন্দিন ['খঞ্জন বর্জন করে] এই চেহারাটাই আমার চরম সত্য ।” সেই মেঘের ডাকের মত আওয়াজ কোথায় ? গলার স্বর কত ক্ষীণ, দুৰ্ব্বল, করুণ ! আমার মনে বড় কষ্ট হল ; ওর গলা জড়িয়ে বললুম, “তোমাকে শুশ্রুষা করব। নিশ্চয় অনেকক্ষণ খাওনি।” ও বললে, “না খাইনি। কাল যখন চলে গেলে আমার মন বিদ্রোহী হয়ে বলে