পাতা:রক্তকরবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

いS)の8 পারচি প্রকাণ্ড একটা লোকসান করবার জন্যে ও যেন প্রতিদিন মরীয়া হয়ে উঠচে । আমাদের ঐ পাহাড়তলায় জান ত মস্ত সরোবর ছিল তাতে আমাদের শঙ্খিনী নদীটার জল কত শত বৎসর এসে পড়েচে, মনে হ’ত কিছুতে ওকে বিচলিত করতে পারবে না। একদিন হঠাৎ বাঁদিকের প্রকাণ্ড পাথরের তলাটা কাৎ হয়ে পড়ল, আর সমস্ত জল উন্মত্ত হয়ে বেরিয়ে চলে গেল। এতদিনের সঞ্চয়কে একদিনে যেন ভীষণ আনন্দে হাসতে হাসতে শূন্য করে দিলে। ওকে দেখে জানিনে কেন মনে হচ্চে ওর সরোবরের পাথরটাতে চাড় লাগচে । তার তলা ক্ষয়ে আসচে। পুরাণ ও কি নিজেকে নিজে সামলাতে পারে না ? ওর ত শক্তিও আছে, শিক্ষাও আছে । অধ্যাপক তুমি কি মনে কর ও আমাদের মত মানুষ ? ও মানুষের ঝড়ের মত, মানুষের বন্যার মত । ওর বুকের উপর সমস্ত যুগের ধাক্কা এসে লাগে যেন— দেখ দেখ, ভিতরে কি একটা অগ্নিকাণ্ড করচে ! কোন বোঝার মধ্যে আগুন ধরিয়ে দিলে কে জানে— জানলার জালের ভিতর দিয়ে আভা আসচে। ইস, এ যে নীল আগুন। VL ৪ [ দৃশ্যান্তর চিহ্ন ] অধ্যাপক ও পুরাণবাগীশ পুরাণবাগীশ ভিতরে কি প্রলয় কাণ্ড হচ্চে বল ত ! ভয়ঙ্কর শব্দ যে ! অধ্যাপক রাজা বোধ হয় নিজের উপর নিজে রেগেচে । তাই নিজের তৈরি একটা কিছু চুরমার করে দিচ্চে। পুরাণবাগীশ মনে হচ্চে কতকগুলো বড় বড় থাম কুড়মুড় করে পড়ে যাচ্চে। অধ্যাপক অনেকদিন কেবলি সংগ্রহ করতে করতে হঠাৎ সংগ্রহ নেশার উল্টো ধাক্কাটা ওকে লেগেছে। অসাধারণ একটা লোকসান করবার জন্যে ও যেন হন্যে হয়ে উঠচে। আমাদের ঐ পাহাড়তলা সমস্তটা জুড়ে জান ত সরোবর ছিল, শঙ্খিনী নদীর জল এসে ওতে জমা হত— মনে হত কিছুতে ও বিচলিত হবে না। হঠাৎ একদিন ওর বা দিকের মস্ত পাথরের দেয়ালটা কাৎ হয়ে পড়ল আর সমস্ত জল পাগলের অট্টহাসির মত বেরিয়ে চলে গেল। এতদিনের সঞ্চয়কে একদিনেই আত্মঘাতী আনন্দে শূন্য করে দিলে। ইদানীং রাজাকে দেখে মনে হচ্চে ওর সঞ্চয় সরোবরের পাথরটাতে চাড় লাগচে। তার তলা ভিতরে ভিতরে