পাতা:রক্তকরবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○br মিলিয়ে যায় সেই আলোর খবর যে জানে তাকে খুঁজে নিয়ে এস। নইলে যাও, আমার যক্ষপুরীর মজুরদের সঙ্গে সুরঙ্গ খুঁড়তে যাও। তাতেও কিছু কাজ হবে ।” বাবা, এ ত সোজা লোক নয়। শেষকালে কি— হা দাদা, এখানকার টানটাই হচ্চে ঐ যক্ষপুরীর সুরঙ্গ খোদার দিকে। বুদ্ধি বিদ্যে মনুষ্যত্ব সবই ঐ দিকে ঝুঁকতে থাকে। সেই শূন্যটা হা করে থাকে বলেই মানুষ এক একবার চমকে ওঠে। বলে ওর উল্টো পথটা কোথায় ? এখানকার কৰ্ত্তা হঠাৎ এক একদিন পাগলের মত ব্যস্ত হয়ে ওঠে, কেমন যেন হাফিয়ে উঠে বলে, “প্রাণ পুরুষের নাগাল পেলে হয় ।” চোর যেমন রাজভাণ্ডারের তালায় নানান চাবী লাগিয়ে পরখ করে, ও তেমনি নানা রকম জানার কুলুপ নিয়ে কেবলি নাড়াচাড়া করচে। পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে সবগুলোকে কেটে ফেললে প্রাণ রহস্য যদি উদ্ধার হত ওর তাতে একটুও বাধত না। ও বলে জ্ঞানের তপোবনে দয়ামায়া ভালোবাসা ঢুকলেই তপোভঙ্গ হয় । তোমাদের মনিবের নাম কি বললে না ত! ওকে নাম জিজ্ঞাসা করলে বলে, ওর নামকরণ এখনো শেষ হয়নি। বলে জগতের কাছ থেকে নাম অর্জন করে নেব । তা যেন হ’ল, বয়স ? ওর মতে জন্মতারিখ ধরে মানুষের বয়স গোণা ছেলেমানুষী । আসল কথা বয়স বাড়চে ভাবতে গেলেই ওর ভয় হয়। জগতের মধ্যে ও কেবল মরাকেই ভয় করে। তারই সঙ্গে লড়াই করবার জন্যে অস্ত্র খুঁজে বেড়াচ্চে। ওর বয়স গোণবার হিসেবটা কি ? ও বলে, “যে-মানুষ প্রথম বলেছিল এই পৃথিবীজয় শেষ হলে জয় করবার জন্যে নতুন একটা পৃথিবী খুঁজতে বেরব তার সঙ্গে আমার বয়স এক।” এ যেন সেকন্দর শার মত শোনাচ্চে। তারি ভূত না কি ? বল্লুম, “অন্তত সেকন্দর শার চেয়ে বয়সে কিছু ছোটই হব।” সে বললে, “না, যে উলঙ্গ নিরস্ত্র মানুষ প্রথম গুহা খুঁজে বের করে তার মধ্যে লুকিয়ে বেঁচেছিল তুমি তারই সমবয়সী।” বুঝেচি, ও পুরাণযুগের মানুষকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করে। হা, এক যারা ঘেরের মধ্যে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে থাকে, আর যারা ঘের ডিঙিয়ে সবাইকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে বেড়ায়। পুঁথির সঙ্গে মিলল না। আমাদের পণ্ডিতরা বলেন— পুঁথি মানবার মানুষ ও নয়। পাঠশালায় পড়বার সময় নানান ফিকিরে গুরুর আসন হঠাৎ কাৎ করে দেওয়া ওর প্রধান আমোদ ছিল। সেই খেলা আজো ভোলেনি। তোমার বর্ণনা শুনে আমার যে খুব উৎসাহ হচ্চে তা নয়। যাহোক ঐ সৰ্ব্বাঙ্গ ঢাকা গা-ঢাকা মানুষটিকে তোমরা ত একটা কিছু নাম দিয়েচ ?