পাতা:রক্তকরবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নন্দিনী পালোয়ান, আমি তোমাকে সেবা করে আবার সবল করে তুলব। পালোয়ান মন থেকে তার আশা পৰ্য্যন্ত চলে গেচে । জীবনে কোনোদিনই আর বল পাব না। কিন্তু যদি কোনো উপায়ে একবার, হে কল্যাণময় হরি, আঃ যদি একবার- তোমার দয়া হলে কি না হতে পারে- ওর বুকে যদি একবার দাত বসাতে পারি ! নন্দিনী অধ্যাপক ওকে একটু ধর তুমি। দুজনে মিলে আমার বাসায় নিয়ে যাই। তারপরে যখন—— অধ্যাপক সাহস করিনে খঞ্জনী নন্দিনী। এখানকার নিয়মমতে তাতে অপরাধ হবে । নন্দিনী মানুষটাকে মরতে দিলে অপরাধ হবে না ? অধ্যাপক যে অপরাধের শাস্তি দেবার কেউ নেই সেটা অপরাধ নয়। এ লোকটার ভালোমন্দ যা কিছু সবই সর্দার করবে। \වී অধ্যাপক রাজার সঙ্গে তোমার কি রকম কুস্তি হ’ল হে ? পালোয়ান অধ্যাপক মশায়, ওকে কুস্তি বলে ? চিরকালের নিয়মমত কুস্তির গোড়ায় যখন অভিবাদন করচি ও তার জবাব না দিয়েই বাঘের মত পিঠের উপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ল। তারপরে সে জাদু না কি বলতে পারিনে মনে হল ওর সমস্ত দেহটা আমার গায়ে আরেকখানা চামড়ার মত আঁট হয়ে হুহু করে আমার জোর শুষে নিতে লাগল। বিমঝিম করে আমার গা হাত পা ঘুমিয়ে প’ল। এক সময় কানে কানে জিজ্ঞাসা করলে, “তোমার বয়স কত ?” যেই বললুম “তিপ্লান্ন” অমনি যেন বিষম ঘৃণায় শাস-বের-করা লাউয়ের তুম্বিটার মত আমাকে পা দিয়ে ঠেলে ফেলে দিয়ে চলে গেল। নন্দিনী পালোয়ান, সেবা করে আমি তোমাকে আবার সবল করে তুলব। পালোয়ান মন থেকে তার আশা পর্যন্ত চলে গেচে । জীবনে কোনোদিনই আর বল পাব না। কিন্তু যদি কোনো উপায়ে একবার, হে কল্যাণময় হরি, আঃ যদি একবার— তোমার দয়া হলে কিনা হতে পারে— ওর বুকে যদি একবার দাঁত বসাতে পারি ।