পাতা:রক্তকরবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

© ᏄᏬ ঘটনাস্থানটির প্রকৃত নাম নিয়ে ভৌগোলিকদের কাছে মতের ঐক্য প্রত্যাশা করা মিথ্যা স্বৰ্ণলঙ্কা যে সিংহলে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বস্তুত পৃথিবীর নানা স্থানেই স্বৰ্ণলঙ্কার নানা চিহ্ন পাওয়া যায়। কবিগুরু যে সেই অনির্দিষ্ট অথচ সুপরিনির্দিষ্ট স্বৰ্ণলঙ্কার সংবাদ পেয়েছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। কারণ সে স্বৰ্ণলঙ্কা যদি খনিজ সোনাতেই বিশেষ স্থানে প্রতিষ্ঠিত থাকত তবে ল্যাজের আগুনে নষ্ট না হয়ে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠত। স্বৰ্ণলঙ্কার মতই আমার পালার ঘটনাস্থানটির একটি ডাকনাম আছে। তাকে লোকে যক্ষপুরী বলে। তার কারণ এ নয় যে সেখানে পৌরাণিক কুবেরের স্বর্ণসিংহাসন যক্ষের ধন মাটির নীচে পোতা আছে তাল তাল সোনা এবং অন্যান্য সম্পত্তি। সেই পাতালে সুরঙ্গ খোদাই করে এখানকার রাজা সেই ধনহরণে নিযুক্ত। এইজন্য আদর করে এই পুরীকে লোকে বলে যক্ষপুরী। লক্ষ্মীপুরী একে কেন বলে না, তার কারণ, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বৈকুষ্ঠে, যক্ষের ভাণ্ডার পাতালে। রামায়ণের সঙ্গে এই নাটকের কিছু কিছু যে মিল দেখতে পাচ্ছি তার কারণ এ নয় যে, রামায়ণের থেকে এর গল্পটি আহরণ করা। আসল কারণ কবিগুরু আমার এ গল্পটিকে ধ্যানযোগে আগে থাকতেই হরণ করেচেন। তার রাবণ তাঁর স্বর্ণলঙ্কা যে তাঁর পূর্বকালবতী বা সমকালবতী একথা আমি বিশ্বাস করিনে । এ সমস্ত যে বর্তমান কালবতী তার হাজার প্রমাণ আছে। ধ্যানের সিদ্ধ কেটে মহাকবি ভাবীকালের সামগ্রীতে যে কেমন করে হস্তক্ষেপ করতে পারতেন তার আর একটি প্রমাণ আমি দেব। কর্ষণজীবী এবং শোষণজীবী এই দুই জাতীয় সভ্যতার মধ্যে একটা বিষম দ্বন্দ্ব আছে এ সম্বন্ধে বন্ধুমহলে আমি প্রায়ই আলোচনা করে থাকি। কৃষিকাজ থেকে হরণের কাজে মানুষকে টেনে নিয়ে কলিযুগ কৃষিপল্লিকে কেবলি উজাড় করে দিচ্ছে। তাছাড়া শোষণজীবী সভ্যতার ক্ষুধাতৃষ্ণা দ্বেষ হিংসা বিলাসবিভ্রম সুশিক্ষিত রাক্ষসদেরই মতো। আমার মুখের এই কথাটি কবি তাঁর রূপকের ঝুলিতে লুকিয়ে আত্মসাৎ করেচেন তা একটু মন দিয়ে দেখলেই ধরা পড়বে। দূর্বাদলশ্যাম রামচন্দ্রের সীতাকে স্বর্ণপুরীর অধীশ্বর দশানন যে হরণ করে নিয়েছিল সেটা কি সেকালের কথা না একালের ? সেটা কি তাঁর মতো সেই ত্রেতাযুগের ঋষির কথা, না আমার মতে কলিযুগের কবির কথা ? তখনো কি সোনার খনির মালেকরা কৃষকদের ঝুঁটি ধরে টান দিয়েছিল ? আরো একটি কথা মনে রাখতে হবে। কৃষি যে লোভে আত্মবিস্মৃত হচ্চে ত্রেতাযুগে তারই বৃত্তান্তটি গা-ঢাকা দিয়ে বলবার জন্যেই সোনার মায়ামৃগের বর্ণনা আছে। আজকের দিনের রাক্ষসের মায়ামৃগের লোভেই তো আজকের দিনের সীতা তার হাতে ধরা পড়চে নইলে গ্রামের পঞ্চবটচ্ছায়া পক্ষে এ সমস্তই পরবর্তীকালের, অর্থাৎ পরস্ব। এগুলিকে তিনি এমনি কৌশলে ঢাকা দিয়ে নিয়েচেন তাতে সন্দেহ আরো বেশি হয়। তিনি চিত্ৰকূট কিষ্কিন্ধ্যা প্রভৃতি নানা দেশের কথা বলেচেন, অথচ সাতকাণ্ডের মধ্যে কোথাও দক্ষিণ আফ্রিকার নামও নেই – অনুচ্ছেদটির শেষে এই অংশটি বর্জিত হয়েছে অর্থাৎ কেটে দেওয়া হয়েছে। ] বারোয়ারির প্রবীণ মণ্ডলীর কাছে এ কথাটি বলে ভালো করলুম না— পূৰ্ব্বে হতেই সীতাচরিত প্রভৃতি পুণ্যকথা সম্বন্ধে আমাকে অশ্রদ্ধাবান বলে তাঁরা সন্দেহ করে থাকেন । পুণ্যশ্লোক আদিকবি বাল্মীকির প্রতি আমি কলঙ্ক আরোপ করলুম বলে আবার হয়ত তারা আমাকে একঘরে করবার চেষ্টা করবেন । ভরসার