পাতা:রক্তকরবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qbr○ ৫ 'রক্তকরবী রচনার নেপথ্যলোক ও ইতিবৃত্ত ১৩৩০ বঙ্গাব্দের নববর্ষ উদযাপনের (১৪ এপ্রিল ১৯২৩) বারো দিন পরে গরমের ছুটিতে শান্তিনিকেতন বিদ্যালয় বন্ধ হবার আগেই কবি বিশ্রামের জন্য শিলঙ যাত্রা করেন ২৬ এপ্রিল ১৯২৩ তারিখে। শিলঙে ছিলেন ‘জিৎভূম’ নামে একটি বাড়িতে। অনতিদূরে ময়ূরভঞ্জের রাজার শৈলাবাস। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ প্রায় দুমাস ছিলেন শিলঙে, ফিরে আসেন আষাঢ়ের গোড়ায় বা জুন মাসের মাঝামাঝি । শিলঙে এইসময় ছিলেন দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি— অধ্যাপক রাধাকমল মুখোপাধ্যায় ও ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় । কবির সঙ্গে এঁদের মাঝে মাঝেই দেখা হত,বিশেষত নানান সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে। রাধাকমল মুখোপাধ্যায় এর কিছুকাল আগে বোম্বাই-এর শিল্পকেন্দ্রের শ্রমিকদের অবস্থা দেখার সুযোগ পান, তার বিবরণ রবীন্দ্রনাথকে আলোচনা প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন । কবি গভীর আগ্রহের সঙ্গে সেই বিবরণ শুনেছিলেন। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়কে এই তথ্য জানানোর পর অধ্যাপক রাধাকমল মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, তখনও তিনি জানতেন না যে কবির মনে একটি নাটকের প্লট তৈরি হচ্ছিল এই বিবরণকে কেন্দ্র করে। শিলঙে থাকতে এই সময়ে ‘রক্তকরবী রচনার নেপথ্যের বিবরণ মাননীয়া লেভী রাণু মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলাম, ১৯৮৬ সালের ১৭ নভেম্বর তারিখের এক সাক্ষাৎকারে তার হো চি মিন সরণির বাসভবনে। সেই বিবরণের প্রাসঙ্গিক অংশ এখানে উল্লেখ করছি। কবির এবারের এই যাত্রায় সঙ্গে ছিলেন মীরা দেবী, প্রতিমা দেবী, পুপে এবং রাণু অধিকারী। শ্ৰীমতী রাণুর পিতার সঙ্গে আগেই কবির পরিচয় হয়েছিল এবং এই পরিবারটির সঙ্গে ক্ৰমেই ঘনিষ্ঠতা বেড়ে উঠছিল। শ্ৰীমতী রাণু সেই সূত্রেই তাঁর । বাবার সঙ্গে মাঝে মাঝেই শান্তিনিকেতনে এসে থাকতেন । এবারেও তিনি সেইভাবেই কাশী থেকে শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন। তখন তিনি সদ্য বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হয়ে কলেজে পড়েন। বয়স ষোলোর কাছাকাছি। সম্ভবত এবারে সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে কাশী থেকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন। রথীন্দ্রনাথ তাদের শিলঙে পৌঁছে দিয়ে ফিরে যান শান্তিনিকেতনে। শিলঙের জিৎভূম বাড়িতে তারা থাকতেন, সুন্দর বাংলো, সুন্দর নির্জন পাহাড়ি পরিবেশে তাদের দিনগুলো কেটে যেত আনন্দের মধ্যে। কবি একা একটি ঘরে থাকতেন, তার পাশের ঘরে থাকতেন মীরা দেবী, রাণুকে নিয়ে। তার উল্টোদিকের ঘরে প্রতিমা দেবী থাকতেন পূপে বা নন্দিতাকে নিয়ে। এই সময়, এই বাংলোর নীচে থাকতেন মিস গ্রিন নামে এক মার্কিন মহিলা। প্রায় প্রতিদিন প্রতিমা দেবী মেয়েদের নিয়ে বেড়াতে বেরোতেন। এই ‘জিৎভূম বাংলোর কাছেই ময়ূরভঞ্জের রাজার আবাস, সেখানে তখন থাকতেন সুচারু দেৰী । সঙ্গে পুত্র ধুবেন্দ্র এবং মেয়ে সিসি। সিসির সঙ্গে রাণুর ‘খুব ভাব ছিল । তাঁর মাঝে মাঝেই