বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রথম মত্ততা তাঁহার কাটিয়া গিয়াছে বলিয়া এ আদর্শও তাঁহার মন হইতে সরিয়া গিয়াছে। বস্তুতঃ উপনিষদের

ঈশাবাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথাঃ মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ধনম্॥

এই মহাবাক্যটি যেমন তাঁহার পিতার জীবনে মূলমন্ত্রস্বরূপ হইয়াছিল, তাঁহার জীবনেও এই আদর্শেরই প্রভাব কাজ করিতেছে দেখিতে পাওয়া যায়। কেবল ব্যক্তিগত জীবনে নয়, আমাদের সমাজতত্ত্বের মধ্যে যে এই আদর্শটি রহিয়াছে, যাহার জন্য সমাজ বন্ধন না হইয়া মুক্তির কারণ হয়, আমাদের দেশের প্রাচীন ইতিহাসের বৃহৎ জীবনক্ষেত্রে এই ঈশ্বরের দ্বারা সমস্ত পূর্ণ করিয়া দেখিবার আদর্শকে কবি প্রত্যক্ষ করিলেন। সংসারকে পুরাপুরি গ্রহণ করিয়া তাহাকে অতিক্রম করিলে তাহাকে সংসার ত্যাগ করা বলে না। সংসারকে অতিক্রম করা মানেও এ নয় যে সংসারের সঙ্গে কোনো সম্বন্ধই থাকিবে না— সংসারকে অতিক্রম করার অর্থ সংসারকে ব্রহ্মের মধ্যে সত্য করিয়া জানা। তেমন করিয়া জানিতে গেলে বন্ধন এবং মুক্তি এক কথা হইয়া পড়ে, ভোগ এবং ত্যাগে কোনো বিচ্ছেদ থাকে না।

 আমি যদি ভুল বুঝিয়া না থাকি তবে এই কি তাঁহার প্রতিষ্ঠিত ব্রহ্মচর্যাশ্রমের ভিতরকার কথা নয়? কর্মের দ্বারাই কর্মবন্ধনকে অতিক্রম করিয়া সর্বত্র ব্রহ্মের উপলব্ধিকে প্রত্যক্ষ করার সাধনাই কি এ আশ্রমের মর্মের মধ্যে নাই? বস্তুতঃ আমি এখানকার কর্ম অংশটুকুকে এই বড় সাধনার অঙ্গীভূত বলিয়া জানি, সেইজন্য ইহাকে কোনোদিনই প্রাধান্য দিই না। এখানে বিশ্বপ্রকৃতির উদার সহবাসে এবং মঙ্গলকর্মে মন নির্মল হইয়া জলস্থল-আকাশে, সমস্ত মনুষ্যলোকে, সর্বত্র আপনার চেতনাকে প্রসারিত করিয়া দিবে এবং ব্রহ্মের দ্বারা সমস্তই

১০০