বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পরিব্যাপ্ত করিয়া দেখিবে— কোনো সামাজিক সংস্কারের দ্বারা নহে, কোনো জাতিগত বিরোধবুদ্ধির দ্বারা নহে। এ আশ্রমের আকাশ, দিগন্তপ্রসারিত প্রান্তর, তরুলতা সেই বিরাট অনুশাসনকে প্রচার করিতেছে যে, যাহা-কিছু আছে তাহা ঈশ্বরের মধ্যে আচ্ছন্ন করিয়া সত্য করিয়া জানো।

 যে সুবৃহৎ ধর্মের আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত হইয়া কবি প্রাচীন ভারতবর্ষের দিকে ঝুঁকিয়া পড়িয়াছিলেন তাহার সঙ্গে স্বাদেশিকতার একটা প্রবল উত্তেজনা এক সময়ে মিশিয়াছিল কেন, এখানে এ প্রশ্নটি ওঠা স্বাভাবিক। আমি পূর্বেই এক রকম করিয়া ইহার উত্তর দিয়া আসিয়াছি। আমি বলিয়াছি যে, স্বদেশের একটি অখণ্ড ভাবরূপ তাঁহার চিত্তকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করাতে তিনি হিন্দুসমাজকে কেবল তাহার বিকৃতি ও দুর্বলতার দিক হইতে না দেখিয়া আপনার অখণ্ড ভাবের দ্বারা খুব বৃহৎ খুব মহৎ করিয়া দেখিয়াছিলেন। ভাবের দ্বারা অনুরঞ্জিত করিয়া সব জিনিসকে দেখা কবির প্রকৃতিসিদ্ধ। এ দেখাকে নিন্দা করা চলে না, কারণ, সত্যকে তাহার অন্তরতম জায়গায় দেখিতে গেলেই সমস্ত বাহ্য আবরণকে ভেদ করিয়া দেখিতে হইবে। তথাপি ভাব যদি বাস্তবমূলক না হয়, তবে সে অসত্যকেই সত্যের স্থানে বসাইয়া ফেলে। তখন অনুভূতি মাত্রা ছাড়াইয়া যায়, কোনটা গ্রহণীয় এবং কোনটা বর্জনীয় তাহা বিচার করিবার সাধ্য থাকে না। সমাজকে যাহা শিথিল ও জড়প্রায় করিয়াছে, ইহার প্রকৃত মহত্ত্বকে যা অবরুদ্ধ ও আচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছে, বড় আদর্শের সঙ্গে তাহাও একীভূত হইয়া খিচুড়ি পাকাইয়া বসে। ভাবের সঙ্গে বাস্তবের বিচ্ছেদ এইজন্যই কোনো ক্ষেত্রেই বাঞ্ছনীয় নহে।

তাঁহার আধুনিক উপন্যাস ‘গোরা’ যাঁহারা পাঠ করিয়াছেন তাঁহারা

১০১