হইয়া সকল প্রতিষ্ঠানকে স্থায়ী ও পাকা করিয়া গড়িয়া তোলে। আমাদের রাষ্ট্রীয় ঐক্য নাই— সমাজকেও যখন আমরা ভাঙিলাম তখন দেখিতে দেখিতে প্রতিক্রিয়া আরম্ভ হইল। একদল লোকে বুলি ধরিল, সমাজসংস্কারের প্রয়োজন নাই শুধু নয়, হিন্দুসমাজের মতো আদর্শ সমাজ কোথাও হইতে পারে না— ইহার সকল প্রথা সকল আচারেরই সার্থকতা আছে।
এরূপ হওয়াই স্বাভাবিক। ইহাতে প্রমাণ হয় যে, সমাজের মধ্যে আত্মরক্ষার প্রবৃত্তি একেবারে ক্ষীণ হইয়া যায় নাই।
‘গোরা’ যাঁহারা পাঠ করিয়াছেন তাঁহারা জানেন সমাজের এই সকল বিচিত্র ঘাতপ্রতিঘাত সেই উপন্যাসটিতে কেমন আশ্চর্য শক্তির সঙ্গে দেখানো হইয়াছে। তাহাতে আধুনিক কালের যে সমস্যাটি আমাদের চক্ষের সম্মুখে দেদীপ্যমান হইয়া উঠিয়াছে তাহা এই যে, ভাষা জাতি ধর্ম ও সমাজের বহুতর ভাগবিভাগে আমাদের দেশ শতধা বিচ্ছিন্ন, কিন্তু তাহাদের ঐক্য দান করিবার জন্য কোনো শক্তি এ দেশে কাজ করিতেছে না। আমাদের দেশের মধ্যে সৃজনীশক্তির কোনো প্রকাশ নাই। আমরা যাহা-কিছু গড়ি তাহা সাম্প্রদায়িকতার ক্ষুদ্র সংকীর্ণতার সীমা ছাড়াইয়া যায় না— ব্যক্তিগত মতামত কেবলই ফাটল ধরাইয়া ভিত্তিকেই দীর্ণ করিতে থাকে— আমাদের অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানগুলি উপস্থিত এবং অনাগত সমস্ত দেশবাসীর একত্রিত চিত্তের মিলনমন্দিরস্বরূপ হয় না, তাহার মধ্যে বিশ্বমানবের রূপ প্রকাশ পায় না।
এ সমস্য| বাস্তবিকই জীবন-মৃত্যুর সমস্যা। যে দেশের মর্মের মধ্যে সৃজনীশক্তি দুর্বল, বাহিরের আঘাতে তাহার মৃত্যু ঘটে। জগতের বহু জাতিকে এইরূপ কারণে বিলুপ্ত হইতে দেখা গিয়াছে।
সমস্যাটা এত বড় গুরুতর ইহা অনুভব করিয়াই রবীন্দ্রনাথ হিন্দু-
১০৩