বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সমাজকে স্বাদেশিকতার একটা পরিপূর্ণ ভাবের দ্বারা বড় করিয়া অনুভব করিয়া সজোরে আঁকড়াইয়া ধরিতে চাহিয়াছিলেন।

 তাঁহার মনে হইত বঙ্গদর্শনের অনেক প্রবন্ধে এ কথা তিনি ব্যক্ত করিয়াছেন যে, ইউরোপীয় জাতিদের যেমন নেশন সকল স্বাতন্ত্র্যকে সকল বিচ্ছেদকে একটা ঐক্য দিয়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে জোরালো করিয়া রাখিয়াছে, আমাদের তেমনি বহুকালের একটা সমাজ আছে, তাহার ভালোমন্দ-বিচার পরে হইবে, কিন্তু তাহাকে প্রাণ দিয়া খাড়া করিয়া রাখাই আগে প্রয়োজন। সেইখানেই আমাদের সমস্ত জাতি মিলিবে। সেইখানেই আমাদের সমস্ত সেবা, সমস্ত পূজা আসিয়া উপস্থিত হইবে। সেই ‘স্বদেশী সমাজ’কে জাগ্রত না করিলে আমরা বিদেশের আক্রমণস্রোতে ভাসিয়া যাইব, পৃথিবীর ইতিহাস হইতে আমাদের নাম বিলুপ্ত হইয়া যাইবে। বস্তুতঃ এ দিক হইতে দেখিলে, ইহার বিরুদ্ধে কোনো যুক্তি নাই। যদি ইহা সত্য হয় যে, অনুকরণ করিয়া আমরা বাঁচিব না— কোনো জাতিই কোনোদিন বাঁচে নাই— তবে আমাদের ইতিহাসের ভিতর হইতেই আমাদের প্রাণ পাইতে হইবে। এবং আমাদের ইতিহাসে যখন কোনোদিনই আমরা নেশন গড়ি নাই, অথচ সমাজের সূত্রে যখন আমাদের ঐক্যও একটা স্থির হইয়াছিল এবং আছে এখনও, তখন সেই সমাজকে কালের উপযোগী করিয়া অথচ প্রাচীনের নিত্য আদর্শের সঙ্গে সংগত করিয়া গড়িতেই হইবে।

 বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত ‘সমাজভেদ’, ‘ব্রাহ্মণ’, ‘হিন্দুত্ব’, ‘চীনেম্যানের চিঠি’ প্রভৃতি প্রবন্ধ পাঠ করিলে আপনারা এই ভাবেরই পরিচয় পাইবেন।

 গোরা চরিত্রটিকেও রবীন্দ্রনাথ সমাজের মধ্যে এই স্বাজাত্যের উদ্‌বোধকরূপে চিত্রিত করিয়াছেন। বর্ণাশ্রমধর্ম ছিল আমাদের প্রাচীন

১০৪