বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 স্ত্রীবিয়োগের পর, বৎসর যাইতে না যাইতেই মধ্যমা কন্যার মৃত্যু হইল। তাহাকে বায়ুপরিবর্তন করাইবার জন্য যখন তিনি আলমোড়া পাহাড়ে ছিলেন তখন একটি নূতন কাব্য সেখানে রচনা করিয়াছিলেন, তাহার নাম ‘শিশু’। পীড়িতা কন্যা, মাতৃহীন শিশুপুত্র শমী, কবির কাছে পিতার এবং মাতার উভয়ের স্নেহ লাভ করিয়াছিল। সেই একটি গভীর স্নেহ হইতে উৎসারিত এই কাব্যটি বাৎসল্যরসে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে। পুত্রের মধ্যে আপনার কল্পনা প্রবণ বালকহৃদয়ের সুখদুঃখ, জাগিয়া এই কাব্যে শিশুজীবনের আনন্দলোককে উদ্ঘাটিত করিয়াছে।

খোকা মাকে শুধায় ডেকে,
‘এলেম আমি কোথা থেকে,
কোন্‌খেনে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে?’
মা শুনে কয় হেসে কেঁদে
খোকারে তার বুকে বেঁধে,
‘ইচ্ছা হয়ে ছিলি মনের মাঝারে!’

 মায়ের বাল্যের সমস্ত খেলাধূলা পূজা-অর্চনা ও যৌবনের তরুণতার মধ্যে শিশু ছড়াইয়া ছিল— সে একটি বিশ্বের চিরনবীনতার রহস্যে মণ্ডিত ভাব, বিশ্বের আনন্দ-উৎস হইতে মূর্তি ধরিয়া প্রকাশ পাইয়াছে। এ সেই বৈষ্ণব মাধুর্যতত্ত্ব— ভগবানকে যাহারা বাৎসল্যরসের ভিতর দিয়া দেখে তাহাদের সেই মাধুর্যের স্রোতটি ইহার মধ্যে আগাগোড়া প্রবাহিত।

রঙিন খেলেনা দিলে ও রাঙা হাতে
তখন বুঝি রে বাছা, কেন যে প্রাতে
এত রঙ খেলে মেঘে,    জলে রঙ ওঠে জেগে,
কেন এত রঙ লেগে ফুলের পাতে—
রাঙা খেলা দেখি যবে ও রাঙা হাতে।

১০৭