১৩১২ সালে বঙ্গব্যবচ্ছেদ উপলক্ষে দেশব্যাপী যে তুমুল আন্দোলন উপস্থিত হইল, রবীন্দ্রনাথ সেই আন্দোলনের একজন প্রধান উদ্যোগী ছিলেন। সংগীতের দ্বারা, বক্তৃতার দ্বারা, তিনি দেশবাসীর চিত্তকে দেশের আদর্শ ও সত্যের দিকে জাগাইয়া তুলিলেন। তখন স্বাদেশিকতার জীবনের মধ্যাহ্নকাল। কবির বীণা তখন রুদ্রসুরে বাঁধা; তিনি ক্রমাগত ত্যাগের, কঠিনকর্মভার গ্রহণের কথাই আমাদিগকে শুনাইতেছিলেন।
এই সময়ে তাঁহার যে-সকল গদ্য রচনা বাহির হইয়াছে তাহাদের তুলনা নাই। দু-একটি স্থান এখানে তুলিয়া দিলে আশা করি পাঠকদের বিরক্তি উৎপাদন করিবে না:
'যিনি আমাদের দেশের দেবতা, যিনি আমাদের পিতামহদের সহিত আমাদিগকে এক সূত্রে বাঁধিয়াছেন, যিনি আমাদের সন্তানের মধ্যে আমাদের সাধনাকে সিদ্ধিদান করিবার পথ মুক্ত করিতেছেন··· দেশের অন্তর্যামী সেই দেবতাকে··· এখনো আমরা সহজে প্রত্যক্ষ করিতে পারি নাই। যদি অকস্মাৎ কোনো বৃহৎ ঘটনায়, কোনো মহান্ আবেগের ঝড়ে, পর্দা একবার একটু উড়িয়া যায়, তবে এই দেবাধিষ্ঠিত দেশের মধ্যে হঠাৎ দেখিতে পাইব, আমরা কেহই স্বতন্ত্র নহি, বিচ্ছিন্ন নহি— দেখিতে পাইব, যিনি যুগযুগান্তর হইতে আমাদিগকে এই সমুদ্রবিধৌত হিমাদ্রি-অধিরাজিত উদার দেশের মধ্যে এক ধনধান্য—এক সুখদুঃখ— এক বিরাট প্রকৃতির মাঝখানে রাখিয়া নিরন্তর এক করিয়া তুলিতেছেন, সেই দেশের দেবতা দুর্জেয়, তাঁহাকে কোনোদিন কেহই অধীন করে নাই··· তিনি ইংরেজ রাজার প্রজা নহেন·· তিনি প্রবল, তিনি চিরজাগ্রত— ইহার এই সহজ মুক্ত স্বরূপ দেখিতে পাইলে তখনই আনন্দের প্রাচুর্যবেগে আমরা অনায়াসেই পূজা করিব, ত্যাগ করিব, আত্মসমর্পণ করিব।·· তখন দুর্গম পথকে পরিহার করিব না, তখন
১০৯