বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পরের প্রসাদকেই জাতীয় উন্নতিলাভের চরম সম্বল মনে করাকে পরিহাস করিব এবং অপমানের মূল্যে আশু ফললাভের উঞ্ছবৃত্তিকে অন্তরের সহিত অবজ্ঞা করিতে পারিব।’[]

 ঐ বৎসরে বিজয়াসম্মিলনের বক্তৃতার অগ্নিময়ী বাণী আমাদের অন্তরে এখনও দু-একটা স্ফুলিঙ্গ রক্ষা করিয়াছে। সে-সকল বাণী স্মরণ করিলে সমস্ত শরীর রোমাঞ্চে কণ্টকিত হইয়া উঠে:

 ‘ঈশ্বরের কৃপায় আজ বিজয়ার মিলনকে আমরা নূতন করিয়া বুঝিলাম— এতদিন আমরা তাহার যথাযোগ্য আয়োজন করি নাই।··· আজ বুঝিয়াছি যে মিলন আমাদিগকে বরদান করিবে, জয়দান করিবে, অভয়দান করিবে, সে মহামিলন গৃহপ্রাঙ্গণের মধ্যে নহে— সে মিলন দেশে। সে মিলনে কেবল মাধুর্যরস নহে, সে মিলনে উদ্দীপ্ত অগ্নির তেজ আছে— তাহা কেবল তৃপ্তি নহে, তাহা শক্তি দান করে।···

 ‘বাংলাদেশে চিরকাল বাস করিয়াও বাংলাদেশের এমন অখণ্ড স্বরূপ আমরা আর কখনো দেখি নাই।···সেই জন্যই আজ আমাদের চিরন্তন দেবমন্দিরে কেবল ব্যক্তিগত পূজা নহে, সমস্ত দেশের পূজা উপস্থিত হইতেছে।··· আজ হইতে আমাদের সমস্ত সমাজ যেন একটি নূতন তাৎপর্য গ্রহণ করিতেছে। আমাদের গার্হস্থ্য, আমাদের ক্রিয়াকর্ম, আমাদের সমাজধর্ম একটি নূতন বর্ণে রঞ্জিত হইয়া উঠিতেছে— সেই বর্ণ আমাদের সমস্ত দেশের নব-আশা- প্রদীপ্ত হৃদয়ের বর্ণ। ধন্য হইল এই ১৩১২ সাল, বাংলাদেশের এমন শুভক্ষণে আমরা যে আজ জীবন ধারণ করিয়া আছি আমরা ধন্য হইলাম।·· মনে রাখিতে হইবে, আজ স্বদেশের স্বদেশীয়তা আমাদের কাছে যে প্রত্যক্ষ হইয়া উঠিয়াছে ইহা রাজার কোনো প্রসাদ বা অপ্রসাদের উপর নির্ভর করে না; কোনো

১১০


  1. অবস্থা ও ব্যবস্থা: বঙ্গদর্শন, আশ্বিন ১৩১২