বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এমন সময় হঠাৎ কবি আন্দোলন হইতে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করিয়া লইলেন। ন্যাশন্যাল বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি সকল উদ্যোগের অগ্রণী হইয়া, পল্লী-সমিতি স্বদেশী-সমাজ প্রভৃতি গঠনের প্রস্তাব ও পরামর্শ ও কিছু কিছু কাজ আরম্ভ করিয়া দিয়া, যখন সমস্ত কর্ম হইতে তিনি সরিয়া পড়িলেন, তখন তাঁহার পরম ভক্তগণও একটু বিস্মিত হইয়াছিলেন। এ একেবারে অপ্রত্যাশিত। বেশ মনে আছে, দেশের লোকের কাছে ইহার জন্য তাঁহাকে কী নিন্দাবাদ, কী বিদ্রূপই সহ্য করিতে হইয়াছিল। কিন্তু কেন এরূপ করিলেন?

 ইহার উত্তর আমি পূর্বেই দিয়াছি। তিনি এক দিকে ক্রমাগত আপনার কল্পনা-রচিত ভাবের মধ্যে দেশকে যে রূপে উপলব্ধি করিবার চেষ্টা করিতেছিলেন, কর্মক্ষেত্রে নামিয়া সে ভাব বাস্তবের আঘাতে ক্রমাগতই ভাঙিয়া যাইবার দশায় পড়িয়াছিল। অন্য দিকে যে তপোবনের বিশ্ববোধের সাধনায়, আপনাকে সকল হইতে বঞ্চিত করিয়া সকলকে আপনার মধ্যে অনুভব করিবার সাধনায়, তিনি তপস্যা করিবেন সংকল্প করিয়া আশ্রম প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন, সে চিরজীবনের তপস্যা কর্মের সাময়িক উত্তেজনায় ও উন্মত্ততায় আবিল হইয়া বিলুপ্তপ্রায় হইবার উপক্রম করাতেই তাঁহার ক্ষুধিত চিত্ত আপনাকে সকল বন্ধন হইতে বিচ্ছিন্ন করিতে দ্বিধামাত্র বোধ করিল না।

 এই ঘটনাই কবিজীবনে বারম্বার ঘটিয়াছে। কেবলই বন্ধনে জড়ানো এবং কেবলই বন্ধন ছিন্ন করা। কখনো সৌন্দর্যে, কখনো প্রেমে, কখনো স্বদেশের কর্মক্ষেত্রে, যখনই যাহাতে ঢুকিয়াছেন— কী তীব্র আবেগে তাহাদের অনুরঞ্জিত করিয়া অপরূপ করিয়া দেখিয়াছেন! বাস, ঐখানেই সমাপ্তি। বীণায় যেই তাহার পরিপূর্ণ সংগীত ঝংকৃত হইয়া উঠিয়াছে, অমনি কি তার ছিঁড়িল এবং আবার নুতন তারে নুতন গান গাহিবার

১১৩