তাঁহার শেষজীবনের কুটিরখানি তুলিয়াছেন।
এই সাধনার মধ্যে কবি যে এখনও নিমগ্ন হইয়া আছেন— সকল সত্যকে রসময় করিয়া প্রত্যক্ষ উপলব্ধি করিবার সাধনায়, সমস্ত বিশ্বপ্রকৃতিকে মানবপ্রকৃতিকে মানব-ইতিহাসকে একের মধ্যে অখণ্ড করিয়া বোধ করিবার সাধনায়, তাহা কি আর বলিয়া দিতে হইবে? ‘রাজা’ নাট্যে সৌন্দর্যবোধের পরিপূর্ণতার অভাবের বেদনা সুদর্শনার চরিত্রের মধ্যে কবি দেখাইয়াছেন— সে সুবর্ণের চোখ-ভোলানো রূপ দেখিয়া মজিল এবং তাহার স্বামীর ‘সব-রূপ-ডোবানো রূপ’কে প্রবৃত্তির মোহে পড়িয়া অবজ্ঞা করিল! সেই আপনার প্রকৃতির বিশেষ একটি আবরণের মধ্যে বাঁধা থাকিবার জন্য, সেই প্রবল আত্মাভিমানের জন্য, তাহার কী জ্বালা, কী ভয়ংকর ছট্ফটানি। তাহার উল্টা দিকে ঠাকুরদার চরিত্রে কবি সকলের মধ্যে একটি অবাধ প্রবেশের আনন্দের ভাবকে কী উজ্জ্বল করিয়া তুলিয়াছেন! ঠাকুরদা এই নিখিল উৎসবের প্রাঙ্গণে ‘ফোটা ফুলের মেলা’র সঙ্গে সঙ্গে ‘ঝরা ফুলের খেলা’ দেখিতেছেন, নানা বিচিত্র লোকের সকল বিচিত্রতার সুরই যে একতানের মধ্যে সম্মিলিত হইতেছে ইহা অনুভব করিতেছেন।
কী আনন্দ! কী আনন্দ! কী আনন্দ!
দিবারাত্রি নাচে মুক্তি, নাচে বন্ধ।
কিন্তু সুদর্শনার যে অহংকারের চিত্র কবি অঙ্কিত করিয়াছেন তাহার মূল্য আছে। ‘রাজা’ নাট্যের ভিতরে এই অহংকারের বিশেষ একটি তত্ত্ব আছে। ইহা যদিচ আমাদের নিজেদের ভালো লাগার এক-একটি বিশেষ আয়োজনের মধ্যে ক্ষণকালীন তৃপ্তি দিয়া অবশেষে দশগুণ অতৃপ্তির বেদনাকে জাগায়, তথাপি এই অহংকারটিই আমাদের জীবনের সেই রাজার, সেই স্বামীর কামনার ধন। তিনি চান যে, এইটিই তাঁর
১২১