পায়ে আমরা বিসর্জন করি। সেইজন্য সুদর্শনা যখন তাঁহাকে আঘাত করিয়া চলিয়া গেল তিনি তাহাকে নিবারণ করিলেন না। তিনি তাঁহাকে সাত রাজার সাত রিপুর টানাটানির হাত হইতে রক্ষা করিলেন, কিন্তু দেখা দিলেন না। তিনি জানেন যাহার যতখানি অহংকারের আয়োজন তাহার বেদনার গভীরতা ততখানি বেশি এবং বেদনা-অন্তে তাঁহার সঙ্গে মিলনও তাহার ততই সম্পূর্ণতর।
সুরঙ্গমা সরল বিশ্বাসী ভক্তের একটি চিত্র। তাহার প্রকৃতির মধ্যে বিচিত্রতা নাই— সে এক সময় পাপের পথে গিয়া পড়িয়াছিল, তার পর রাজার দাসী সাজিয়া সকলের সেবায় সে কৃতার্থতা লাভ করিয়াছে।
সে সুদর্শনার সঙ্গে সঙ্গে থাকিয়া সেই সরল ভক্তির সুরটি হিমবিন্দুর মতো তাহার ক্ষুব্ধ অভিমানের শিখার উপরে ধরিতে লাগিল। অহংকারের আগুন যখন বেদনার অশ্রুজলে নিভ-নিভ হইয়া আসিল তখন বেদনার মধ্যে সেই স্বামীর গোপন বীণা সুদর্শনার ভিতরে ভিতরে বাজিতেছিল। এবং সেই বীণার সুরে বিগলিত হৃদয় যখন ধূলামাটির মধ্যে, সকলের মধ্যে, নম্র নত হইয়া আপনাকে একেবারে বিসর্জ্জন দিল তখনই রাজার সঙ্গে তাহার পূর্ণ মিলন ঘটিল।[১]
বাংলাদেশ ধন্য যে এমন একটি পরিপূর্ণ জীবন তাহার সম্মুখে স্তরে স্তরে স্তবকে স্তবকে এমন করিয়া উদ্ঘাটিত হইল।
আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের সাধনা, আমাদের দেশের সাধনা, আমাদের সৌন্দর্যের সাধনা, আমাদের ধর্মের সাধনা কালে কালে যতই অগ্রসর হইতে থাকিবে ততই এই জীবনটির আদর্শ জাজ্বল্যমান হইয়া
১২২
- ↑ লেখকের ‘কাব্যপরিক্রমা’ গ্রন্থে ‘রাজা’ নাট্যের বিস্তৃত আলোচনা দ্রষ্টব্য।