বিশ্বের ক্ষেত্রে ছুটিয়া বাহির হইয়া পড়িবার জন্য প্রাণ ব্যাকুল হইয়া উঠে।
বিশ্বকে, মানুষের জীবনকে নানা দিক দিয়া উপলব্ধি করিবার এই ব্যাকুলতাই কবি রবীন্দ্রনাথের কবিত্বকে উৎসারিত করিয়াছে ইহাই আমাদের বিশ্বাস। আপনার জীবনের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে যে জীবনকে পাওয়া যাইতেছে না অথচ দূর হইতে যাহার পরিচয় পাইতেছি, নিজের অন্তরের ঔৎসুক্যের তীব্র আলোকে তাহা দীপ্যমান হইয়া দেখা দেয়। কবির ব্যাকুল কল্পনার শতধাবিচ্ছুরিত নানাবর্ণময় রশ্মিচ্ছটায় প্রদীপ্ত জগদ্দৃশ্যই আমরা তাঁহার কাব্যের মধ্যে দেখিতে পাই। এক দিক হইতে যে অবস্থাকে প্রতিকূল বলিয়াই মনে করা যাইত, কবিত্বের পক্ষে তাহাও অনুকূল হইয়াছে। কাপড়ের আবরণের মধ্যে খাঁচার পাখির গান আরো বেশি করিয়া স্ফূর্তি পায় তাহা দেখা গিয়াছে; এ ক্ষেত্রেও বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সম্পূর্ণভাবে যোগের অভাবই আমাদের কবির বিশ্ববোধকে এমন অসামান্যভাবে তীব্র করিয়া তাহাকে নানা ছন্দের অশ্রান্ত সংগীতে উৎসারিত করিয়া দিয়াছে।
আমাদের দেশের অন্তরতম চিত্তে এই বিশ্বের জন্য বিরহবেদনা জাগিয়া উঠিয়াছে। সে অভিসারে বাহির হইতে চায় কিন্তু এখনো সে পথ চেনে নাই— সে নানা দিকে ছুটিতেছে এবং নানা ভুল করিতেছে। অনেক ঠেকিয়া তাহাকে এই কথাটি আবিষ্কার করিতে হইবে যে, নিজের পথ ছাড়া পথ নাই— অন্য পথের গোলকধাঁধায় ঘুরিয়া ঘুরিয়া শেষকালে নিজের রাজপথটি ধরিতে হয়। কবির কাব্যের মধ্যেও আমরা তাঁহার সেই বিশ্ব–অভিসারযাত্রার ভ্রমণের ইতিহাস দেখিতে পাই। তিনি তাঁহার অনুভূতির আবেগে ছুটিয়া চলিয়াছেন, মনে করিয়াছেন এইবার যাহা চাই তাহা পাইয়াছি,
১৩